শহরে নতুন জোনাল সম্পাদক

আঠাশ বছর পর সরলেন কীর্তি দে বক্সী

মুখ বদল দশমবারে। টানা ন’বার নির্বাচিত হওয়ার পর সিপিএমের মেদিনীপুর জোনাল সম্পাদকের পদ থেকে সরলেন কীর্তি দে বক্সী। নতুন জোনাল সম্পাদক হলেন সারদা চক্রবর্তী। সোমবার মেদিনীপুর শহরের কৃষক ভবনে এই জোনাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে শুরু হওয়া সম্মেলন শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয় পাল প্রমুখ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪০
Share:

মুখ বদল দশমবারে।

Advertisement

টানা ন’বার নির্বাচিত হওয়ার পর সিপিএমের মেদিনীপুর জোনাল সম্পাদকের পদ থেকে সরলেন কীর্তি দে বক্সী। নতুন জোনাল সম্পাদক হলেন সারদা চক্রবর্তী। সোমবার মেদিনীপুর শহরের কৃষক ভবনে এই জোনাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে শুরু হওয়া সম্মেলন শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয় পাল প্রমুখ।

দলের গঠনতান্ত্রিক কাঠামোয় জোনাল কমিটির সূচনা লগ্ন থেকেই সিপিএমের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন কীর্তিবাবু। ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ন’বার সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। দলের নিয়মানুযায়ী, কেউই তিন বারের বেশি সম্পাদক পদে থাকতে পারবেন না। এই নিয়মেই শহরে জোনাল সম্পাদক পরিবর্তন হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। সরতে হয়েছে কীর্তিবাবুকে। অবশ্য ঘনিষ্ঠ-মহলে তিনি আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, বহুদিন ধরে জোনাল সম্পাদকের পদে আছেন। ফলে, দলের নিয়মানুযায়ী সম্পাদকের পদ থেকে তাঁর সরে যাওয়াটা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি শহরে দলের ব্যাটন তুলে দিলেন সারদাবাবুকে। যুব সংগঠন থেকে উঠে আসা সারদাবাবু সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের কাজকর্ম দেখভাল করতেন। শহরে তাঁর পরিচিতও রয়েছে। বয়সও জোনাল কমিটির অধিকাংশ সদস্যের তুলনায় কম। শহরের শ্রমিক নেতাকে দলের জোনাল সম্পাদকের পদে পেয়ে উজ্জীবিত দলের ছাত্র- যুবরাও। দলের একাংশেরও আশা, অদূরেই শহরে সিপিএমের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

Advertisement

কী বলছেন বিদায়ী সম্পাদক? মঙ্গলবার কীর্তিবাবু বলেন, “দলের নিয়মানুযায়ী, তিন বারের বেশি কেউই সম্পাদক পদে থাকতে পারবেন না। আমি বহুদিন ধরে জোনাল সম্পাদকের পদে ছিলাম। ওই নিয়মেই সরে গিয়েছি।” শহর জোনাল সম্পাদকের পদ থেকে সরে গেলেও কীর্তিবাবু অবশ্য জোনাল কমিটির সদস্য রয়েছেন। তিনি দলের জেলা কমিটিরও সদস্য। অন্য দিকে, নবনির্বাচিত জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী বলেন, “দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা ভাল ভাবে পালন করার সব রকম চেষ্টা করব।” দলের এখন কার্যত দুর্দিন। জেলার বেশ কিছু এলাকায় পায়ের তলায় মাটিই নেই। মেদিনীপুরের পরিস্থিতিও ভাল নয়। এই অবস্থায় শহরে হারানো সমর্থন কী ফিরে পাওয়া সম্ভব? সারদাবাবু বলছেন, “পরিস্থিতি সব দিন একই থাকে না। সময় বদলাচ্ছে।”

লোকাল কমিটির সম্মেলন পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই অবশ্য দলের অন্দরে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কারণ দেখা যায়, শহরের ৬টি লোকাল কমিটির মধ্যে মাত্র একটিতে সম্পাদক পদে পরিবর্তন হয়েছে। লোকাল কমিটির সম্পাদকদের গড় বয়সও ৫৯। যদিও দলের রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শ ছিল, , তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের তুলে এনে দলের মুখ করতে হবে। গড়বেতা- কেশপুরের মতো এলাকায় তা হলেও শহরে কেন তা হল না? নেতৃত্ব সাফাই দেন, যাঁরা সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা কেউই তিন বারের বেশি সম্পাদক ছিলেন না। দলেরই একাংশের অবশ্য অভিযোগ, একাধিক তরুণ যোগ্য নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। দলের অন্দরে একাংশ কর্মীর এও আক্ষেপ শোনা যাচ্ছিল, “কঠিন সময়ে যুগোপযোগী সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন। সংগঠনে গতি আনতে তরুণ প্রজন্মের হাতেই দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। দুর্ভাগ্য! এটা বুঝেও অনেকে বোঝার চেষ্টা করছেন না!”

জোনাল সম্মেলনে অবশ্য দলের নীচুতলার মতামতকে কিছুটা হলেও গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নেতৃত্ব। তাই দুই যুব নেতা জয়ন্ত মজুমদার এবং শান্তনু দত্তকে জোনাল কমিটির সদস্য করা হয়েছে। জয়ন্তবাবু শহরের কাউন্সিলর। প্রায় আড়াই যুগ পুর দলে ‘মুখ’ বদল করে শহরে সিপিএম হারানো সমর্থন পুনরুদ্ধার করতে পারে কি না, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement