জলাশয়: নিকাশি নেই। টানা বৃষ্টিতে জল থই থই পটাশপুরের বড় রাস্তার মোড়। নিজস্ব চিত্র
জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে বাসিন্দাদের পানীয়জলের চাহিদা মেটাতে বসানো হয়েছে সাব-মার্সিবল পাম্প কিংবা নলকূপ। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে খেজুরি-২ ব্লকের জনকা পঞ্চায়েত এলাকায় গোড়াহার জালপাই গ্রামে জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ বছরের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। অসুস্থ হয়েছিলেন এলাকার আরও ১৯ জন বাসিন্দা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তদন্তে উঠে আসে, বাসিন্দাদের পানীয় জলের ভরসা নলকূপের জল দূষণের জন্যই ওই ঘটনা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ওই রিপোর্টের পরে নড়েচড়ে বসেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
সামনেই গরমকাল এবং বর্ষায় আন্ত্রিকের প্রকোপ রুখতে তাই আগে থেকেই সতর্ক জেলা প্রশাসন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে খেজুরি-সহ জেলার গ্রামীণ এলাকায় থাকা নলকূপ ও সাব- মার্সিবল পাম্পে তোলা জলের নমুনা পরীক্ষা করে আন্ত্রিক প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করতে উদ্যোগী নিয়েছে জেলা পরিষদ। এর জন্য জেলার প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা নলকূপ, সাব-মার্সিবল পাম্প ও গ্রামীণ জলসরবরাহ প্রকল্পের জলের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে পরীক্ষার জন্য।
জেলা সভাধিপতি দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘গরমের সময় জেলায় আন্ত্রিকের প্রকোপ রুখতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে আন্ত্রিকপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা হয়েছে। তাই জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলিতে নলকূপ-সহ সমস্ত পানীয় জলের উৎস থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কাজে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।’’
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, গ্রামীণ এলাকার পানীয় জলের উৎসব বলতে নলকূপ ও সাব-মার্সিবল পাম্পে তোলা জল। ওই জলে আর্সেনিক বা অন্য কোনও জীবাণু আছে কিনা, পরীক্ষার জন্য জলের নমুনা সংগ্রহ রপকে প্রতিটি পঞ্চায়েতে একজন ওয়াটার কালেক্টর বা জল সংগ্রাহক রয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের ২২৩টি পঞ্চায়েতে রয়েছেন এই জল সংগ্রাহকেরা। জলের নমুনা সংগ্রহের পর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ল্যাবরটরিতে পৌঁছে দেওয়া তাঁদের কাজ। জলের নমুনা পরীক্ষার পর তার ফল রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতকে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
অভিযোগ, জেলার গ্রামীণ ও বাজার এলাকা মিলিয়ে কয়েক হাজার নলকূপ, সাব-মার্সিবল পাম্প রয়েছে। কিন্তু বহু পঞ্চায়েতেই জলের নমুনা সংগ্রহ ও তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর কাজ নিয়মিত হয় না। ফলে জেলার অনেক এলাকায় পানীয়জলের মান খারাপ হলেও তা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় থাকে না। ফলে ওই সব এলাকায় জলবাহিত রোগের প্রকোপের সম্ভবনা রয়েছে। খেজুরির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে তাই এবার আগাম সতর্কতা নিচ্ছে জেলাপরিষদ ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।
জেলা সভাপধিপতি বলেন, ‘‘প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় নলকূপ, সাব-মার্সিবল ও গ্রামীণ জল সরবরাহ প্রকল্প থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ল্যাবরটরিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’