নিমতৌড়ির কাছে ভাড়াবাড়িতে থাকা এক বাংলাদেশি যুবককে খুনে এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার ভোরে হাওড়া থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে তমলুক থানার পুলিশ। ধৃত সিদ্দিক মিয়া বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কেশিয়াড়ি থানার রামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ধৃতকে বুধবার তমলুক আদালতে তোলা বিচারক ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিদ্দিক মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে মহিলা ঘটিত সম্পর্ক নিয়ে বিরোধের জেরে ওই যুবককে অভিযুক্তরা খুন করেছিল । ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের কারণ ও বাকি অভিযুক্তকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তমলুকের নিমতৌড়ির কাছে কুলবেড়িয়া গ্রামের মাঠের মধ্যে খালের জলে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে তমলুক থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। তদন্তে জানা যায় ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ওই যুবকের মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া কলকাতার একটি দোকানের রসিদ থেকে গোপাল বিশ্বাস নামে একজনের নাম জানতে পারে। এরপর কলকাতার ওই দোকানের রসিদের সূত্র ধরে সেই দোকানে থাকা রবি বিশ্বাস নামে আর এক কর্মীর পরিচয় জানতে পারে। এরপর জানা যায় তমলুকের নিমতৌড়িতে খুন হওয়া যুবকের নাম তাপস ধাড়া (২৬)। তাঁর সঙ্গে গোপাল বিশ্বাস নামে ওই যুবক তমলুকে একই ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। তাপসের বাড়ি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কেশিয়ানির রামদিয়া গ্রামে।
পুলিশ তদন্তে জানতে পারে তাপসের সঙ্গে থাকা গোপাল বিশ্বাস নামে ওই যুবকের নাম মুর্শিদাবাদের কান্দি এলাকার ভোটার তালিকায় থাকলেও তিনি আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা শেখ কুদ্দুস। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কেশিয়ানি থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে রামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা তাপস ধাড়ার নিখোঁজ থাকার বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
ওই ঘটনায় বাংলাদেশের কেশিয়ানি থানার পুলিশ শেখ কুদ্দুসকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, তাপস ধাড়াকে খুন করার পরে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল তাপসেরই গ্রামের বাসিন্দা কুদ্দুস ও সিদ্দিক মিয়া নামে দুই ভাই। আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা দুই ভাই শেখ কুদ্দুস, গোপাল বিশ্বাস নামে ও তাঁর ভাই সিদ্দিক মিয়া রবি বিশ্বাস পরিচয়ে এই রাজ্যে থাকত। কুদ্দুস মুর্শিদাবাদের কান্দিতে গোপাল বিশ্বাস নামে ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল। তিনজনই এই রাজ্যে এসে ইলেকট্রিক কুকার বিক্রির
কাজ করতেন।
তমলুকের নিমতৌড়িতে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন তাপস ও কুদ্দুস। সেখানে মাঝমধ্যে আসতেন সিদ্দিক। তাঁদের মধ্যে মহিলা ঘটিত বিরোধের জেরেই গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে তমলুকের ভাড়াবাড়িতে সিদ্দিক, কুদ্দুস-সহ আরও কয়েকজন মিলে তাপসের গলার নলি কেটে খুন করে। খবর পেয়ে বুধবার ভোররাতে তাঁকে হাওড়ার একটি জায়গা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ । ধৃত বছর চল্লিশের সিদ্দিক আগেও বাংলাদেশে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য প্রায় ১০ বছর খেটেছিল। অভিযুক্ত সিদ্দিককে প্রাথমিকভাবে জেরা করে জানা গিয়েছে মহিলাঘটিত সম্পর্ক নিয়ে বিরোধের জেরেই তাপসকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনায় জড়িত শেখ কুদ্দুসকে এখানে আনার জন্য বাংলাদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।