উদ্ধার হওয়া কাপাসি চিল।
ধান খেত থেকে অসুস্থ একটি চিলকে উদ্ধার করে বন দফতরের হাতে তুলে দিলেন বিনপুরের এক তরুণ।
জরকাশুলি গ্রামের বাসিন্দা রাজদীপ প্রতিহার শনিবার সকালে পারিবারিক চাষজমিতে গিয়ে ধানখেতে লাল চোখের সাদা চিলটি দেখতে পান। চিলটি ডানা ঝাপটে ওড়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পারছিল না। চিলটিকে বাড়িতে এনে শুশ্রূষা করে শিলদা রেঞ্জ অফিসে গিয়ে জমা দেন তিনি। রাজদীপ বলেন, ‘‘ধবধবে সাদা রঙের চিলটির ডানায় কালো ছোপ রয়েছে। প্রথমে শঙ্খচিল ভেবেছিলাম। পরে বনকর্মীদের থেকে জানলাম, এটি ‘ব্ল্যাক উইংড কাইট’ বা কাপাসি চিল। রাজদীপ সদ্য স্নাতক হয়ে এখন মেদিনীপুরের একটি সংস্থায় ডিএলএড কোর্স করছেন। তিনি ঝাড়গ্রাম সচেতন নাগরিক মঞ্চের সদস্যও। রাজদীপ বলেন, ‘‘চিলটির বাঁ ডানায় আঘাত ছিল। এই ধরনের পাখি বাড়িতে রাখা বেআইনি। তাই সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন করেছি।’’ শিলদার রেঞ্জ অফিসার দেবজ্যোতি ভৌমিক মানছেন, ‘‘জরকাশুলি গ্রামের এক তরুণ কাপাসি চিলটিকে দিয়ে গিয়েছেন। সেটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’’
হাজারিবাগের বাসিন্দা বিশিষ্ট পক্ষী বিশারদ শিবশঙ্কর গোস্বামী আদতে ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র। পাখিটির ছবি দেখে তিনি জানাচ্ছেন, স্থানীয় ভাবে শিকারি এই পাখিটিকে কাপাসি চিল বলা হয়। পোশাকি নাম ‘ব্ল্যাক উইংড কাইট’। শরীর সাদা হলেও ডানায় কালো ছোপ থাকে। চোখ রক্তবর্ণ। হাওয়ার গতিবেগকে কাজে লাগিয়ে ডানা নাড়িয়ে এরা আকাশে এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে। যেটা বাজ প্রজাতির অনেক চিলই পারে না। মূলত শিকারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার জন্য শূন্যে ভাসমান অবস্থায় স্থির থাকতে কাপাসি চিল।
শিবশঙ্কর আরও জানালেন, আগে গ্রাম বাংলায় এই ধরনের চিল প্রচুর দেখা যেত। ঝাড়গ্রাম শহরে দু’দশক আগেও হামেশাই কাপাসি চিলের দেখা মিলত। কিন্তু নগরায়নের ধাক্কায় এখন প্রায় দেখাই যায় না। তবে গ্রামীণ এলাকায় এখনও কাপাসি চিল রয়েছে। শিবশঙ্কর মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কাপাসি চিল চাষিদের বন্ধু। ধানখেতের ক্ষতিকারক ইঁদুর ও অন্য কীটপতঙ্গ এরা খেয়ে সাফ করে দেয়। তবে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ পর্যায়ের এই পাখিটি অদূর ভবিষ্যতে বিপন্ন হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন ‘বার্ড ওয়াচার’ অনুভব হোতা। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা অনুভব ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে কম্পিউটর সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গত সাত বছর ধরে পাখি পর্যবেক্ষণ করছেন অনুভব। তিনি বলছেন, ‘‘চাষাবাদে ক্রমাগত রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ইঁদুর খেয়ে অনেকক্ষেত্রে কাপাসি চিল মারা যায়। নয়তো অসুস্থ হয়ে মানুষের হাতে ধরা পড়ে। এই চিলের শিকার ধরার পদ্ধতি দেখার মতো। হেলিকপ্টার যেমন উড়ন্ত অবস্থায় এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারে, কাপাসি চিলও তেমন ডানা ঝাপটে এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে। শিকারের উপর ঝাঁপানোর আগে বহুবার এমনভাবে থাকতে দেখেছি।’’