—প্রতীকী চিত্র।
এক দল রাজ্যের শাসক। অন্যদল কেন্দ্রের। দু’দলের টানপড়েনে দুই এলাকায় বন্ধ হয়ে গেল বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ। যন্ত্রপাতি ও শ্রমিকদের সরিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার সংস্থা। প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছেন এলাকার মানুষজন।
প্রায় দু 'সপ্তাহ ধরে প্রকল্প ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছিল কাঁথি-১ ব্লকের মাজিলাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানকার শ্যামরাইবাড় এবং বিরামপুট মৌজায় জল জীবন মিশন প্রকল্পে রিজ়ার্ভার তৈরি করে সরবরাহের উদ্যোগী হয়েছিল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। বরাত পায় রাজ্য সরকারের ঠিকাদার সংস্থা ম্যাকিনটস বার্ন'।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ২৬ ডিসেম্বর শ্যামরাইবাড় গ্রামে মাটি পরীক্ষা করতে যন্ত্রপাতি এবং বেশ কিছু শ্রমিক পাঠানো হয়। কয়েকদিন চেষ্টা চালিয়েও তাঁরা সেখানে কাজ শুরু করতে পারেননি। ঠিকাদার সংস্থার তরফে অভিযোগ, স্থানীয়দের বাধায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিরামপুট গ্রামে গত ২৯ ডিসেম্বর কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেখানে মাটি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর যান কাঁথি-১ বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস এবং দফতরের আধিকারিকেরা। স্থানীয়দের একাংশ আপত্তি জানান কাজ নিয়ে। কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন বিডিও। ঠিকাদার সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লবকুমার নস্কর চলতি বছরের গোড়ায় জনস্বাস্থ্য দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের কাছে চিঠি দিয়ে কাজ না করার কথা জানিয়ে দেন। জানান, স্থানীয়দের ঝামেলার জেরে যন্ত্রপাতি এবং শ্রমিকদের সরিয়ে নিয়ে যাবেন।
৩ জানুয়ারি থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়। কিন্তু বিরামপুটে প্রকল্পের কাজ না শেষ হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার সংস্থার যন্ত্রাংশ ছাড়া হবে না বলে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। অন্যদিকে শ্যামরাইবাড় থেকে যন্ত্রাংশ ও ঠিকা শ্রমিকদের তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। পরে শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়া হলেও যন্ত্রাংশ এখনও আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না এবং কাঁথি-১ ব্লকে মাটি পরীক্ষা করার পাশাপাশি জল সরবরাহের কাজ শুরু করে তমলুক ডিভিশনের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগ। ময়নায় কোনও সমস্যা হয়নি। এবার কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপি দখল করেছে। মাজিলাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতও পেয়েছে গেরুয়া শিবির। বিগত গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি দু’জায়গায় প্রকল্পের জন্য জায়গা চিহ্নিত করে। দরপত্রও হয়ে গিয়েছিল। যদিও, ক্ষমতায় আসার পর দু’টি প্রকল্পের জন্য আলাদা জায়গা চূড়ান্ত করে বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি।
এ বিষয়ে বিধায়ক তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপকুমার দাস বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা গায়ের জোরে ঠিকাদারের সরঞ্জাম এবং লোকেদের তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। বারে বারে জানানো সত্ত্বেও শাসক দলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছেন না বিডিও। ব্লক প্রশাসনের মদতে দু’টি প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে।’’ যদিও কাঁথি-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি গণেশ মহাকুড় বলছেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের নিয়ম না মেনে আলাদা জায়গায় দু’টো প্রকল্পকে সরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সাধারণ মানুষ আপত্তি জানিয়েছে। তাই হয়তো ঠিকাদার সংস্থা কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়ে কাজ করতে চাইছে না। আমরা চাই আলোচনার ভিত্তিতে উপযুক্ত জায়গায় প্রকল্পের কাজ হোক।’’
কাঁথির মহকুমা শাসক শৌভিক ভট্টাচার্য বলছেন, "বিরামপুটে স্থানীয়দের দাবি মেনে ঠিকাদার সংস্থা কাজ করতে রাজি হয়েছে। সেখানে কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশাবাদী।’’