এই সব জমিতে এক সময় নিন তৈরি হতো। নিজস্ব চিত্র
একদিকে বকেয়া মেলেনি। অন্যদিকে নুন তৈরিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কার্যত মাথায় হাত পড়েছে কর্মহীন হয়ে পড়া বেঙ্গল সল্টের ৪০টি কর্মচারি পরিবারের। আদানি গোষ্ঠীর হাত ধরে তাজপুর বন্দর গড়ে উঠলে অনুসারি শিল্প হওয়ার কথা এলাকায়। তার আগে সংসার চালাতে বিকল্প রুজির জোগাড়ে মরিয়া ওই মানুষগুলি। কেউ শুকোচ্ছেন শুঁটকি মাছ, আবার কেউ কেউ মন্দারমণিতে গিয়ে হোটেলে কাজ করছেন।
স্বাধীনতার আগে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাত ধরে তৈরি হয় বেঙ্গল সল্ট প্রাইভেট লিমিটেড। মন্দারমণি কোস্টাল থানার অন্তর্গত রামনগর-২ ব্লকের দাদনপাত্রবাডে গড়ে ওঠে বেঙ্গল সল্ট। ২০০৬ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। প্রথমে বায়ু চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। প্রাক্তন বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনীশ গুপ্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। পরে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় শিলান্যাস করেন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের। ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সৌর প্রকল্পের জন্য আনুমানিক খরচ ৭৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই জায়গায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের শুরুতেও বিপত্তি দেখা যায়।
এদিকে, নুন তৈরি প্রকল্প বন্ধ হওয়ার সময় বেতন বকেয়া ছিল অনেকেরই। তাঁরা সেখানে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে থাকেন। প্রকল্পের মধ্যে থাকা পুকুরগুলিতে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আবার কেউ কেউ লবন তৈরি করতেন। গত বছর দুর্গা পুজোর আগে আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা ওই এলাকায় ঘুরে গিয়েছেন। শোনা গিয়েছিল, তাজপুরের প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠলে এখানে জমি অধিগ্রহণ হবে। ওই জমিতে সমুদ্র বন্দরের অনুসারি শিল্প গড়ে উঠবে। যদিও সে সব কিছুই এখন পর্যন্ত হয়নি। বেঙ্গল সল্টে কাজ করতেন মুক্তেশ্বর পয়ড়্যা। তিনি বলছেন, ‘‘সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নিজের ছোট ছোট জায়গায় ভাগাভাগি করে লবণ তৈরি করতাম বা মাছ চাষ করতাম। কোনও রকমের সংসার চলত। কিন্তু বছর দুয়েক আগে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির জন্য জমি সমান করে দেওয়া হয়েছে তাতে আর কিছুই করতে পারছি না। এর ফলে জীবিকা নির্বাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’’ আরেক বাসিন্দা অমিত শঙ্কর দাস বলছেন, ‘‘৪০টি পরিবার বসবাস করে। এখন সকলে নিরুপায়। কবে সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠবে তা অনিশ্চিত। তাই বাধ্য হয়ে খটিতে শুটকি মাছ শুকনো করতে যেতে হয়।’’
কতদিন এভাবে চলবে? সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হয় পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজিকে। তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কারা দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, ‘‘ওঁদের দাবি রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। ওখানে বন্দরের অনুসারি শিল্প গড়ে উঠবে। তার জন্য আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা এলাকা ঘুরে গিয়েছেন। আমরা খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান করে ফেলব।’’