প্রতীকী ছবি
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজের জবকার্ড রয়েছে। কিন্তু নিকাশিখাল, পুকুর খনন ও বনসৃজন-সহ বিভিন্ন কাজে আগ্রহী হতেন না এই সব শ্রমিকদের একাংশ। পরিবর্তে আরও বেশি মজুরির আশায় বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থা ও ব্যক্তিগত কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। করোনা সতর্কতায় লকডাউনের জেরে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই সব শ্রমিকদের প্রায় সকলেরই আয় বন্ধ। ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে চলে যাওয়া ওই শ্রমিকদের প্রায় সকলেই ফিরে আসছেন। রাজ্য সরকারের তরফে ওই শ্রমিকদের একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বিভিন্ন কাজের জন্য পঞ্চায়েতে দরবার করছেন ওই শ্রমিকেরা। ফেল প্রকল্পে যুক্ত পুরনো শ্রমিকদের সঙ্গে নতুন করে বহু শ্রমিকের আবেদন জমা পড়ছে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে। তবে লকডাউনের জেরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নিকাশি খাল, পুকুর খনন ও বনসৃজনের মতো কিছু প্রকল্প ছাড়া কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। তার উপর আমপানের পর বৃষ্টিতে অনেক পুকুর ডুবে যাওয়ায় ১০০ দিনের প্রকল্পে পুকুর খননে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে শ্রমিকদের কাজ দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পঞ্চায়েত কর্তাদের।
পূর্ব মেদিনীপুরে ২৫টি ব্লকে ২২৩ টি গ্রামপঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সূত্রে খবর, গ্রামীণ রাস্তা মেরামতি ও খাল সংস্কার, পুকুর খনন, সামাজিক বনসৃজন, চারা তৈরি ছাড়াও ফলের বাগান তৈরি ও আবাস যোজনায় বাড়ি নির্মাণে একশো দিনের কাজের শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় জব কার্ডধারী শ্রমিকদের। এর জন্য শ্রমিক হিসেবে জন্য পঞ্চায়েতে আবেদন জানাতে হয় জবকার্ডধারীদের। কিন্তু ওই জবকার্ডধারীদের অনেকেই একশো দিনের কাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন না বলে পঞ্চায়েতগুলি জানিয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থা ও অন্যত্র শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন নগদ ও বেশি পারিশ্রমিক এবং নিয়মিত কাজ পাওয়ার আশায়। ফলে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এই শ্রমিকদের নিষ্ক্রিয় জবকার্ডধারী হিসেবে গণ্য করা হত। প্রকল্পে যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন সেই শ্রমিকদের বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
কিন্তু গত আড়াই মাস ধরে লকডাউনে কাজ হারানোয় বিপাকে পড়েছেন বহু শ্রমিক। তাঁদের একাংশ একশো দিনের কাজ করতে চেয়ে পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন করছেন। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দার জবকার্ড থাকলেও প্রায় ১ হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেন। বাকিরা ঠিকাদারের কাছে বা অন্যত্র কাজ করতেন। করোনা পরিস্থিতিতে ওই শ্রমিকদের কাজ বন্ধ থাকায় এখন তাঁরা একশো দিনের কাজ করতে চেয়ে আবেদন করেছেন। বর্তমানে এলাকায় ৮ টি প্রকল্পে ৩০০ শ্রমিক কাজ করছেন। বাকিদের কাজ দিতে পারা যাচ্ছে না। তবে আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও পান বরজ তৈরিতে একশো দিনের কাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ নন্দকুমারের কুমরচক পঞ্চায়েতের প্রধান বাসুদেব মন্ত্রী বলেন, ‘‘লকডাউনে কাজ হারানো শ্রমিকদের একশো দিনের কাজে নিযুক্ত করতে প্রশাসনের নির্দেশিকা এসেছে। তবে বর্ষা চলে আসায় এখন কাজের সুযোগ কম থাকায় কাজ দিতে সমস্যা হচ্ছে।’’
জেলাপ্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, লকডাউনে কাজ হারানো শ্রমিক ও ভিন রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের একশো দিনের কাজে যুক্ত করতে পঞ্চায়েতগুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ জন্য নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।