—প্রতীকী চিত্র।
পুর-ওয়ার্ডের কাজে কাটমানি নিয়ে দু’জনের গোলমাল। বছর খানেক আগে সেই গোলমাল থেকে হাতাহাতিও হয়। সেবার মারধরের অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভর্তি হলেও, থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি বিজেপির মহিলা পুর-প্রতিনিধি। এ বার শ্লীলতাহানি ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ তুললেন তিনি। মূল অভিযোগ বিজেপিরই এক কর্মীর বিরুদ্ধে।
শনিবার দুপুরে খড়্গপুর শহরের এই ঘটনা ঘিরে শোরগোল ছড়িয়েছে। খড়্গপুর টাউন থানায় বিজেপি কর্মী অশোককুমার সিংহ-সহ দু’জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপির ওই মহিলা পুর-প্রতিনিধি। অশোক গত পুরভোটে ওই মহিলার নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। বছর খানেক আগেও অশোকের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওই মহিলা পুর-প্রতিনিধি। তবে সে বার থানায় লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি তিনি। এ বার অশোক তাঁর শ্লীলতাহানি এবং শ্লীলতাহানিতে বাধা পেয়ে মারধর করে বলে দাবি ওই মহিলার।
শ্লীলতাহানি ও খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিন অশোকের একাধিক নম্বরে ফোন করা হলে প্রতিটি সুইচড অফ ছিল। পুলিশের দাবি, মূল অভিযুক্ত পলাতক।
ওই মহিলা পুর-প্রতিনিধির দাবি, তিনি বারবার অত্যাচারের শিকার হয়েই এবার অশোক-সহ দু’জনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, এলাকায় একটি রাস্তার নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের থেকে ২০ শতাংশ কমিশন দাবি করেছিল অশোক। তাতে বাধা দেন তিনি। তার পরেই শনিবার দুপুরে ওই পুর-প্রতিনিধির কার্যালয়ে আসে অশোক। দরজা বন্ধ করে টাকার দাবি করে। টাকা না মেলায় শ্লীলতাহানি করে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুর-নির্বাচনে আমার এজেন্ট অশোক সিংহ আমার উপর অত্যাচার করত। নিয়মিত আমাকে ভয় দেখিয়ে টাকার দাবি করত। এমনকি ও না থাকলে আমি জিততে পারতাম না দাবি করে অনৈতিক কাজও করে। ঠিকাদারের থেকে কাটমানি চায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি সম্প্রতি একটি রাস্তার কাজে ওর কাটমানি বন্ধ করে দেওয়ায় এভাবে কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে আমাকে শারীরিক নিগ্রহ করে। বাধা দেওয়ায় অশোক-সহ দু’জন আমাকে মারধর করে খুনের চেষ্টাও করে।’’
যদিও অশোক ঘনিষ্ঠদের দাবি, ওয়ার্ডের মানুষ কাজ না পাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। তাই এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন ওই মহিলা পুর-প্রতিনিধি।
এই ঘটনার পিছনে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না ব্যক্তিগত আক্রোশ যুক্ত রয়েছে— তা নিয়ে চর্চা শুরু হলেও মহিলা তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা পুর-প্রধান কল্যাণী ঘোষ অবশ্য একে ব্যক্তিগত অশান্তির জের বলেই মনে করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো প্রথম নয়, এর আগেও ওই অশোকের বিরুদ্ধেই মারধরের অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির ওই পুর-প্রতিনিধি। বারবার ওদের মধ্যে এই অশান্তি লেগেই থাকছে। তাই এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে মনে হচ্ছে না।’’
বিড়ম্বনায় পড়েছে বিজেপিও। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রশ্নে বিজেপির খড়্গপুর দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি শ্রীনাথ সিনহা বলেন, ‘‘এতে দলের কোনও বিষয় নেই। ওই পুর-প্রতিনিধির সঙ্গে অশোকের ব্যক্তিগত ঝামেলা থেকে বারবার এমন হচ্ছে। আমরাও এটা ভাল চোখে নিচ্ছি না। এর পরে সাংসদ দিলীপ ঘোষ এলে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে সমাধানের চেষ্টা করব।’’