দেবব্রত দাসের স্মরণে সভা। পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতিতে। নিজস্ব চিত্র।
পরবর্তী পঞ্চায়েত নির্বাচনের এক বছর বাকি। তার আগে অসুস্থ হয়ে বুধবার মারা গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবব্রত দাস। ওই শূন্য পদে কে বসবেন, সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবব্রত গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। প্রায় এক বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। বুধবার বিকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই দেবব্রতের মৃত্যু হয়। রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির তিনবারের সভাপতি দেবব্রত দাস ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদ সদস্য হিসাবে জিতে মৎস্য-প্রাণী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষ পদ পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালে জেলা পরিষদ সদস্য হিসাবে ফের জয়ী হন। এবং ওবিসি-ভুক্ত হিসাবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেবব্রত সভাধিপতি পদে বসেন।
কিন্তু তাঁর পরে এবার কে?
৬০ সদস্য বিশিষ্ট জেলা পরিষদে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা রয়েছে তৃণমূলের। তৃণমূল ছেড়ে বিরোধী দল বিজেপিতে যোগ আনন্দময় অধিকারী এবং সোমনাথ ভূঁইয়া ছাড়া বাকি সব সদস্য তৃণমূলের। তবে সভাধিপতি পদটি অন্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের (ওবিসি) সদস্যদের জন্য সংসক্ষিত। ফলে সভাধিপতি পদের দাবিদার হিসাবে ওবিসি ভুক্ত তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্যরা থাকছেন। আর সে ক্ষেত্রে সভাধিপতির পদে চর্চায় উঠে এসেছে বর্তমান সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান এবং পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিকের নাম।
২০১১ সালে রাজনৈতিক পালা বদলের আগে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। সে সময় জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পূর্ত দফতরের কর্মাধ্যক্ষ পদ পেয়েছিলেন নন্দীগ্রাম জমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুফিয়ান। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূল ফের জেলা পরিষদের ক্ষমতায় আসে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুফিয়ান ফের জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনি ওবিসি-ভুক্ত হিসাবে দ্বিতীয় বারের জন্য সহ-সভাধিপতি পদে বসেন। স্বাভাবিক ভাবে দেবব্রতর মৃত্যুর পরে জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে সুফিয়ানের নাম উঠে এসেছে।
ওই দৌড়ে রয়েছেন পটাশপুরে বিধায়ক উত্তম বারিক। তিনি ওবিসি গোষ্ঠী ভুক্ত। সুফিয়ানের মতো তিনিও এলাকায় দাপুটে নেতা হিসাবে পরিচিত। তবে তৃণমূলের অন্দরের খবর, সুফিয়ান এবং উত্তম ছাড়া ওবিসি-ভুক্ত সদস্য হিসাবে জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাহজাহান আলিও সভাধিপতির পদের দাবিদার। ময়না ব্লক থেকে জেলা পরিষদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত শাহজাহান আগে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদেও ছিলেন। পঞ্চায়েতের কাজের অভিজ্ঞতার নিরিখে তাঁকে বাদ দিচ্ছে না
রাজনৈতিক মহল।
যদিও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনই কিছু নতুন সভাধিপতি পদের দাবিদারদের নামের কোনও ইঙ্গিত দেননি। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথা, ‘‘সাংগঠনিকভাবে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের তমলুক ও কাঁথি জেলা রয়েছে। ফলে জেলা পরিষদের সভাধপতি পদে কাকে বসানো হবে, তা নিয়ে জেলা নেতৃত্বের মতামত বা সুপারিশ নেওয়া হবে কি না ধন্দ রয়েছে। সভাধিপতি কে হবেন, তা নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকদিনের মধ্যেই নাম জানা যাবে বলে আশা করছি।’’