প্রতীকী ছবি।
ধান কেনার এ বারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তিনভাগের একভাগও কেনা সম্ভব হয়নি। ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুরের।
এ বার এই জেলায় সহায়কমূল্যে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এখনও পর্যন্ত কেনা হয়েছে প্রায় ৯৩ হাজার মেট্রিক টন ধান। খাদ্য দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, খোলাবাজারে ধানের দাম ‘ভাল’ রয়েছে বলেই শিবিরে এসে ধান বিক্রিতে মন নেই একাংশ চাষির। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘জেলায় সুষ্ঠুভাবেই ধান কেনা চলছে। নজরদারি রয়েছে।’’ জেলার খাদ্য নিয়ামক অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘‘বিভিন্ন ব্লকে নিয়মিত পরিদর্শন হচ্ছে। সবদিকে নজর রাখা হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, ধান কেনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ধান্য ক্রয় কেন্দ্রে (সিপিসি) নিয়মিত পরিদর্শনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। এখন জেলায় সিপিসি রয়েছে ২৯টি। ২১টি ব্লকের মধ্যে ১৩টি ব্লকে একটি করে। বাকি ৮টি ব্লকে দু’টি করে। প্রয়োজনে আগামী দিনে সিপিসি-র সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।
রাজ্যের অনান্য জেলার পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুরেও গত ১ নভেম্বর থেকে সহায়কমূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে। গতবার ধানের সহায়কমূল্য ছিল ১,৯৪০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। এ বার সেখানে ২,০৪০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। সরাসরি শিবিরে এসে বিক্রি করলে কুইন্টাল প্রতি অতিরিক্ত ২০ টাকা উৎসাহভাতা মিলছে। ধান কেনার নজরদারিতে ব্লকস্তরে একটি কমিটি গড়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। সেই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিডিও।
জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত জেলায় সিপিসি-র মাধ্যমে কেনা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। ইসিএসসি কিনেছে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার মেট্রিক টন। বেনফেড কিনেছে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন। এই জেলায় সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার চাষির কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে। সহায়কমূল্যে ধান বিক্রিতে এ বার ততটা হুড়োহুড়ি নেই কেন? একাধিক মহলের দাবি, খোলাবাজারে ধানের সে ভাবে দাম পড়েনি। তাই এই পরিস্থিতি। শুরুর দিকে খোলাবাজারে দর ছিল ১,৪৫০ থেকে ১,৫৫০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। এলাকা বিশেষে কোথাও কিছুটা বেশি, কোথাও কিছুটা কম। এখন দর যাচ্ছে ১,৬০০ থেকে ১,৭০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। ধান ব্যবসায়ীদের বিক্রি করলে চাষিরা নগদ টাকা পেয়ে যান। তাই তাঁদের অনেকে আর শিবিরে আসছেন না।
এমনিতেই জেলায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়, তার সবটা কখনও সহায়কমূল্যে কেনা সম্ভব হয় না সরকারের। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতে পারে এ বার। সহায়কমূল্যে কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, উৎপাদনের প্রায় ১৮.৫০ শতাংশ। সহায়কমূল্যে ধান কেনার অন্যতম উদ্দেশ্য হল, খোলাবাজারেও চাষিকে ন্যায্য মূল্যে পাইয়ে দেওয়া। চাষিদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, সহায়কমূল্যে ধান কেনায় গতি থাকলে ধান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদাম করাও সহজ হয়। এখন জেলায় দিনে গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হচ্ছে বলে খাদ্য দফতর সূত্রে খবর। এক খাদ্য আধিকারিকের দাবি, ‘‘এ বার জেলায় ধানের অভাবি বিক্রি হচ্ছে না।’’