ফাইল চিত্র।
আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছেন। কিন্তু বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেননি অনেকেই। চিহ্নিত করে এমন উপভোক্তাদের নামে পুলিশে এফআইআর করা শুরু হল পশ্চিম মেদিনীপুরে।
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, শুধু সবং নয়, প্রতিটি ব্লকেই এই পদক্ষেপের নির্দেশ পৌঁছনো হয়েছে। জেলা পরিষদের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘সরকারের থেকে টাকা পাওয়ার পরেও যে সব উপভোক্তা বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে বলা হয়েছে। অনিয়ম বরদাস্ত হবে না।’’ ওই সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি তৈরি যাতে হয়, সে জন্য রাজ্য থেকেও একই দাওয়াইয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে। সম্প্রতি জেলায় এই প্রকল্পের পরিস্থিতির পর্যালোচনা হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক রশ্মি কমল, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পিনাকীরঞ্জন প্রধান প্রমুখ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দু’বছর আগে টাকা পেয়েও বেশ কয়েকজন বাড়ি তৈরির কাজে হাতই দেননি।’’ জানা যাচ্ছে, ২০১৯- ’২০ সালের মধ্যেই দুই কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন, অথচ বাড়ি তৈরি করেননি, জেলায় এমন উপভোক্তার সংখ্যা ২,২৬১। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হচ্ছে।’’
‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’রই বাংলা সংস্করণ ‘বাংলা আবাস যোজনা’। এখন এই প্রকল্পে উপভোক্তাপিছু তিন কিস্তিতে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রথম দু’কিস্তিতে ৬০ হাজার করে এবং শেষ কিস্তিতে ১০ হাজার। পাশাপাশি, উপভোক্তাপিছু ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের ৯৫ দিনের মজুরিও বরাদ্দ হয়। ৬০ শতাংশ টাকা দেয় কেন্দ্র, বাকি ৪০ শতাংশ টাকা দেয় রাজ্য। ২০১২ সালে সমীক্ষার পরে ২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’ ধরেই বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। ২০১৭ সালে ফের সমীক্ষা হয়েছে। কারণ, সে সময়ে নালিশ উঠেছিল, অনেক ‘যোগ্য’ উপভোক্তা তালিকার বাইরে রয়েছেন। এ বার তৈরি হয় ‘আবাস প্লাস’ তালিকা। অবশ্য এই তালিকা ধরে কবে বাড়ি বরাদ্দ হবে, তা ঠিক নেই। নতুন নিয়মে উপভোক্তাদের নামের সঙ্গে আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ১০০ দিনের প্রকল্পের জবকার্ডের সংযুক্তি করা হয়েছে। নিয়ম হচ্ছে, বাড়ির প্রথম পর্যায়ের কাজ হয়ে গেলে তার ছবি সরকারি পোর্টালে আপলোড করতে হয়। এরপরই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়।
জেলায় এই প্রকল্পে ১,৬২,৬১৫টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ১,৬১,৮৫৫টি বাড়ির অনুমোদন মিলেছে। ১,৬০,৪৭৬টির ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তির টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ১,৩৭৯টির ক্ষেত্রে এখনও বরাদ্দ হয়নি প্রথম কিস্তির টাকা। ১,৪৬,৩৭৯টির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। ১৪,০৯৭টির ক্ষেত্রে এখনও বরাদ্দ হয়নি দ্বিতীয় কিস্তির টাকা। ১,৩৯,৯৮৪টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ২১,৮৭১টির কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। জেলা পরিষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যে সব উপভোক্তা বাড়ি তৈরি করতে রাজি নন, পাওয়া টাকা ফেরাতেও রাজি নন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হবেই।’’ সবংয়ে ইতিমধ্যে এমন ৪৮ জন উপভোক্তার নামে পুলিশে এফআইআর হয়েছে বলে খবর। বেশ কয়েকজন বিষ্ণুপুর অঞ্চলের বাসিন্দা। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এফআইআর দেখে পদক্ষেপ হবে।’’