জনসংযোগে পঞ্চায়েত সদস্য ফুলটুসি (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
যত কাণ্ড শালবনিতে! এ বার জনসংযোগে বেরিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁর নাম ফুলটুসি দাস। তিনি শালবনির সাতপাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। ফুলটুসির অবশ্য দাবি, ‘‘আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে!’’
ঘটনা গত শনিবারের। ওই দিন জনসংযোগে বেরোন ওই পঞ্চায়েত সদস্য। গণসাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি করেন এলাকায়। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলকে বিপাকে ফেলতেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একশো দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছে। ওই কর্মসূচি সারার এক সময়ে ফুলটুসিকে গ্রামবাসীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ বারের ভোট যেন আমাদের দেখিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের যে বুথ এজেন্ট থাকবে, তাঁকে দেখিয়ে দিতে হবে ভোট।’’ তাঁর মন্তব্যের এই অংশের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি)।
এরপরই পঞ্চায়েত সদস্যের ওই নিদান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক মাস আগে তৃণমূলের তারকা সাংসদ, বিধায়ক থেকে দলের একাংশ জেলা নেতৃত্বের সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মন্ত্রী তথা শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। এক পাড়া বৈঠকে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘জুন মালিয়া, সায়নী, সায়ন্তিকা, মিমি, নুসরতরা লুটেপুটে খাচ্ছে। এঁরা যদি সম্পদ (দলের) হয়, তা হলে তো আর পার্টি করা যাবে না!’’ শ্রীকান্তের বক্তব্যের ভিডিয়ো ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। দলের অন্দরে শোরগোল ফেলে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শালবনির বিধায়ককে শোকজ করেছিলেন দলের জেলা নেতৃত্ব। তাঁর বেফাঁস মন্তব্যের জন্য এরপর দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন শালবনির বিধায়ক। এ বার বেফাঁস মন্তব্য করে বসেছেন দলের এক পঞ্চায়েত সদস্য।
মাস দুয়েক আগেই জেলায় এসে অভিষেক শুনিয়ে গিয়েছেন, ‘‘আগামী দিন অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। মানুষ ভোট দেবে।’’ সেখানে পঞ্চায়েত সদস্যের এমন বিতর্কিত নিদান কেন, প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য স্পষ্ট জানাচ্ছেন, ওই মন্তব্য দল সমর্থন করে না। তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘আমাদের অনেক পঞ্চায়েতকে গতবারে দাঁড় করানো হয়েছিল, শুধুমাত্র সংরক্ষণের জন্য। রাজনীতি সম্বন্ধে এঁদের নূন্যতম কোনও ধ্যানধারণা নেই!’’ খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি শঙ্কর গুছাইত বলেন, ‘‘মানুষকে ভোট দেখানোর জন্যই এ সব কথা। এটাই তৃণমূলের কালচার।’’বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘শুনেছিলাম তৃণমূলের এক নেতা জেলায় এসে বলে গিয়েছেন, মানুষ তৃণমূলকে যে ভাবে দেখতে চায়, তাঁরা সেই ভাবেই তৃণমূলকে প্রস্তুত করতে বদ্ধপরিকর। এবং সেটাই নতুন তৃণমূল। মানুষ ধরে নিচ্ছেন, এটাই নতুন তৃণমূল!’’