ঝাড়গ্রাম শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তার ধারে কাঁচা নর্দমায় বেহাল নিকাশি। নিজস্ব চিত্র
লাল মাটিতে জল শুষে নেয় বেশি। ফলে নিকাশি নিয়ে আগে কোনও দিনই ভাবতে হয়নি অরণ্যশহরবাসীকে। কিন্তু এখন? জনবহুল কংক্রিটের শহরে হারিয়ে গিয়েছে শালগাছ আর লাল মেঠো পথ। অরণ্যশহর জেলা শহর হয়েছে। কিন্তু পুরোটাই পরিকল্পনাবিহীন ভাবে। যার ফলে ১৮টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট ২১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পুরশহরে এখনও সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থাটাই গড়ে তোলা যায়নি।
২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনদশক ক্ষমতায় থাকা বামেদের দাবি, তাদের আমলে পাকা নর্দমা কম থাকলেও কখনও শহর ভাসেনি। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের কেন্দ্রস্থল পাঁচ মাথা মোড় সহ বেশির ভাগ এলাকায় রাস্তা উপচে জল দাঁড়িয়ে যায়। নিচু এলাকা গুলি জলে ভাসে। ক্ষমতায় থাকাকালীন বামেরা প্রতি বছর নিকাশির জন্য মাস্টার প্ল্যানের প্রতিশ্রুতি দিত। একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৩ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে তৃণমূলের পুরবোর্ড। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন পুরসভার দায়িত্বে রয়েছেন প্রশাসক। কিন্তু নিকাশি নিয়ে কোনও মাস্টার প্ল্যানই হয়নি। শহরবাসীর অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে পরিকল্পনাবিহীনভাবে যেখানে সেখানে কিছু পাকা নালা তৈরি হয়েছে। তাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। শহরে পিচ, কংক্রিট-ঢালাই ও কাঁচা মিলিয়ে ৩১৮ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মাত্র ১৯৫ কিলোমিটার রাস্তার ধারে নালা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ১৯ কিলোমিটার পাকা নালা ও ১৭৬ কিলোমিটার কাঁচা নালা আছে। বাকি ১২৩ কিলোমিটার রাস্তায় কোনও নিকাশি ব্যবস্থাই নেই।
পর্যটন শহর ঝাড়গ্রামের এমন বেহাল নিকাশি নিয়ে সরব বিজেপি। বিজেপি-র নগর মণ্ডলের সভাপতি নন্দন ঠাকুরের কটাক্ষ, ‘‘কেবল ঠিকাদারকে পাইয়ে দেওয়ার উন্নয়ন হয়েছে।’’ যদিও প্রাক্তন তৃণমূল পুরপ্রধান তথা পুরপ্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য দুর্গেশ মল্লদেবের দাবি, ‘‘আমাদের আমলেই পাকা নর্দমা তৈরির কাজে গতি এসেছে।’’
কী বলছেন এলাকাবাসী? ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নুননুনগেড়িয়া এলাকায় পিচ রাস্তার ধারে কাঁচা নর্দমায় জল সরে না। দুর্গন্ধে টেকা দায়। এলাকায় সম্পন্নদের সার-সার বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দা সোমা সরকার, সুপর্ণা সরকার জানালেন, প্রায়ই নোংরা জলে রাস্তা ভাসে। একটু বৃষ্টি হলেই নোংরা জলে বাড়ির উঠোন থইথই করে। ওই ওয়ার্ডেরই লায়ন্স মডেল স্কুলের কাছে ঘন বসতি। অথচ রাস্তার পাকা নালা নেই।
শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর পল্লিতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা বেশি। কাঁচা নালাও নেই। স্থানীয় যুবক এভেন মুর্মু বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলে আমাদের যে কী নরক যন্ত্রণা হয় বোঝাতে পারব না।’’