West Bengal Lockdown

স্বজন দূরে, বাবার শেষকৃত্যে বন্ধুরাই ভরসা

দশম শ্রেণিতে পড়া ছেলে বজলুর ও স্ত্রীকে নিয়ে হলদিয়ার ক্ষুদিরাম নগরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন পেশায় অটোচালক শেখ মুনির(৬০)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০০:৪৯
Share:

পাশে রয়েছে বন্ধুরা। নিজস্ব চিত্র

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সহপাঠীর বাবা। লকডাউন পর্বে স্বজনেরা কাছে নেই। করোনার ভয়ে পড়শিরাও এগিয়ে আসেনি। এই অবস্থায় সদ্য পিতৃহীন দিশাহারা বন্ধুর বাবার মৃতদেহ আগলে মাস্ক পরে রাতভর বসে রইল প্রীতম, তন্ময়, রাজু, হরিওম, আদিত্যরা। শুধু তাই নয়, মৃতদেহ বাড়ি থেকে মসজিদ, সেখান থেকে পাঁচ কিলোমটার কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সমস্ত কাজেই বন্ধুর পাশে থাকল তারা।

Advertisement

দশম শ্রেণিতে পড়া ছেলে বজলুর ও স্ত্রীকে নিয়ে হলদিয়ার ক্ষুদিরাম নগরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন পেশায় অটোচালক শেখ মুনির(৬০)। গত চার মাস ধরে হার্টের জটিল অসুখে ভুগছিলেন তিনি। কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়েছে। লকডাউনের সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য ওষুধ পেতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় মুনিরের। আত্মীয় স্বজন সকলেই থাকে দূরে। করোনা নিয়ে আতঙ্কে এগিয়ে আসেনি প্রতিবেশীরাও। তাই কী ভাবে বাবার দেহ কবরস্থ করা হবে ভেবে পাচ্ছিল না বজলুর। শেষ পর্যন্ত বন্ধুর পাশে এসে দাঁড়ায় সহপাঠী প্রীতম, তন্ময়, হরি, রাজু, শোয়েব, বিশ্বজিৎরা। রাত জেগে শেষকৃত্য পর্যন্ত পাশে থাকল তারা।

হলদিয়ায়র ক্ষুদিরাম নগরের পৌরপাঠভবনের দশম শ্রেণির ছাত্র বজলুর সিএবি লিগে খেলা ক্রিকেটারও। শুক্রবার ক্ষুদিরাম নগরে মসজিদের ভিতরে মুনিরের দেহ আগলে বসেছিল তার বন্ধুরা। ধর্মীয় রীতি মানার পাশপাশি সকলেই করোনা নিয়ে সতর্কতা বিধি মেনে হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পরে নিয়েছিল। এনে দেওয়া হয়েছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যার ব্যবস্থা করে দেয় বিশ্বজিত, প্রধানরা। হলদিয়া পুরসভার তরফে মৃতদেহবাহী গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়।

Advertisement

রাজ্য হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড় তন্ময় স্কুলের ফার্স্ট বয়। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছিলেন। তন্ময়ের কথায়, ‘‘বজলুরের কেউ নেই। ওদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। ওর বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা রাত থেকেই ওর পাশে আছি। এরকম একটা কঠিন সময়ে ওকে ছেড়ে যাই কী করে।’’ মসজিদে মুনিরেরে মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে দুই শিক্ষক সুজয় মাইতি ও শশাঙ্ক নায়েক বসলেন, ‘‘হরিওম, তন্ময়রা আজ আমাদের নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দিচ্ছে। ওদের জন্য গর্ব হচ্ছে।’’ আর বজলুরের কথায়, ‘‘আমাদের পরিবারের কেউ নেই এখানে। পড়শিরাও কেউ এল না। বন্ধুরা এ ভাবে পাশে এসে না দাঁড়ালে কী হত কে জানে!’’ তার আক্ষেপ, ‘‘বাবার হার্টের ওষুধটা অনেক দোকানেই খুঁজেছি।পাইনি। পেলে হয়তো বেঁচে যেতেন বাবা।

হলদিয়ার পুর পারিষদ আজিজুল রহমান বলেন, ‘‘বজলুরের সহপাঠীরা দেখিয়ে দিল সবার উপরে মানুষই সত্য।ওদের জন্য সকলের গর্ব হওয়া উচিত।’ ক্রিকেটার বজলুরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার ক্লাব টিউলিপও।

তবে এর পর কী হবে জানে না বজলুর। তার কথায়, ‘‘বাবাই একমাত্র রোজগার করতেন। মাও অসুস্থ। এখন কী ভাবে সংসার চলবে জানি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement