West Bengal Lockdown

ঠাসা দোকানে শিকেয় দূরত্বের সুরক্ষা বিধি

পাশের শহর জেলা সদর মেদিনীপুরে ইতিমধ্যেই বাজারগুলিকে ফাঁকা মাঠে সরানো হয়েছে। রবিবার সেই নিয়মেই মেদিনীপুরে বসেছিল বাজার

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর ও চন্দ্রকোনা রোড শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০১:৫৭
Share:

অসচেতন: চন্দ্রকোনা রোডে দুর্লভগঞ্জের বলাকা মাঠে বসা বাজার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

মানুষের অসচেতনতা অর্থহীন করে তুলেছে লকডাউনের বিধি। কোথাও সকালে বাজার, দোকান খুলতেই উপচে পড়া ভিড়ে হুড়োহুড়ি করছেন ক্রেতারা। কোথাও আবার বাজার সরলেও ক্রেতাদের সরানো যাচ্ছে না।

Advertisement

খড়্গপুর শহরে গত কয়েকদিন ধরেই সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রমরমিয়ে চলছে বাজার। আনাজ, মাছ থেকে মুদি দোকানে উপচে পড়ছে ভিড়। মানা হচ্ছে না দূরত্ব বজায়ের নিয়মও। শহরের গোলবাজার, ইন্দা, খরিদা বাজারের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। বাজারের নাম করে অকারণ রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বাইক আরোহীরাও। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রয়োজনে ফাঁকা এলাকায় বাজারগুলিকে স্থানান্তর করা হবে। পরিকল্পনা চলছে।”

পাশের শহর জেলা সদর মেদিনীপুরে ইতিমধ্যেই বাজারগুলিকে ফাঁকা মাঠে সরানো হয়েছে। রবিবার সেই নিয়মেই মেদিনীপুরে বসেছিল বাজার। তবে খড়্গপুরে এ দিনও ঘিঞ্জি বাজারে ভিড় দেখা গিয়েছে। মালঞ্চর বাসিন্দা রেলকর্মী গৌরাঙ্গ প্রধান বলেন, “কিছু মানুষের জন্য পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারগুলি যাতে মেদিনীপুরের মতো ফাঁকা জায়গায় সরিয়ে আনা যায় সেটা প্রশাসনককে দেখতে হবে। আর অকারণ কেউ যাতে পথে না ঘোরে সেটাও দেখতে হবে।” একই দাবি তুলেছেন ইন্দার প্রবীণ বাসিন্দা প্রহ্লাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বাজার অন্যত্র সরাতে রাজি বিক্রেতাও। ইন্দা বাজার কমিটির সম্পাদক পিন্টু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সত্যিই বাজারে ভিড় হচ্ছে। আমরা মানুষকে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু বুঝছে না। আর বাজার ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গেলে ছাউনি নিয়ে সমস্যা হবে। রোদে দীর্ঘক্ষণ বসব কীভাবে!” প্রশাসন সূত্রে খবর, ইন্দা বাজারটিকে ওটি রোডের উপর বসানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। গোলবাজারের ক্ষেত্রে কাপড়ের বাজার বা বিএনআর ময়দানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা হচ্ছে। মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী বলেন, “আমি নিজে বাজারগুলি ঘুরেছি। সত্যিই খুব ভিড় হচ্ছে। শনিবারই আমরা কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছিলাম। শহরের বাজারগুলি ফাঁকা জায়গায় দ্রুত সরানো হবে।”

চন্দ্রকোনা রোডে আবার অন্য ছবি। এখানে আনাজ ও পাইকারি দুটি পৃথক বাজারকে দুটি পৃথক স্থানে সরানোর কথা শনিবারই প্রশাসন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো রবিবার সকালে পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বাজারে চলে আসেন। তাঁদের চেষ্টায় পাইকারি বাজারকে চন্দ্রকোনা রোডের দুর্লভগঞ্জে একটি ক্লাবের ফুটবল মাঠে সরানো হয়। কিছুক্ষণ পরে সামনের চৌরাস্তার পাশে বসা দৈনিক আনাজ বাজারের ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি ফুটবল মাঠের পাইকারি বাজারে এসে বসে পড়েন। ক্রেতারাও এসে ভিড় জমান সেই মাঠে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ফুটবল মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

শেষমেশ পুলিশকে নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি রাজীব ঘোষ-সহ পঞ্চায়েতের লোকজন বাজার দুটিকে পৃথক করতে উদ্যোগী হন। তড়িঘড়ি মাইকে ঘোষণা করা হয়, এ দিন থেকেই দৈনিক আনাজ বসবে রেল স্টেশনের পাশে অপর্ণাপল্লির মাঠে, পাইকারি বাজার বসবে ক্লাবের ফুটবল মাঠে, আর মাছ বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে পুরনো স্থানেই বসবে। মাইক প্রচারে কাজ হয়। প্রশাসনের নির্দেশ মতো যে যার জায়গায় বসে। ভিড় কমে ফুটবল মাঠে। পরে সভাধিপতি উত্তরা বলেন, ‘‘এক স্থানেই দুটি বাজার বসেছিল। প্রচুর মানুষও জুটে গিয়েছিল। পরে আমরা তিনটি বাজারকে পৃথক তিনটি স্থানে বসতে বলেছি।’’ বাজার সরলেও ক্ষোভ মেটেনি। চন্দ্রকোনা রোডের বিডিও অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘বাজারগুলিকে আলাদা বসতে বলা হয়েছে। তাই বসছে। সমস্যা কিছু নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement