সোমবার খড়্গপুর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশন খড়্গপুরের সদর স্টেশন। টানা ৬৭ দিন ট্রেন আসার ঘোষণা শোনেনি এই স্টেশন। থমথমে স্টেশন জেগে উঠল সোমবার। বেজে উঠল মাইক। একের পর এক যাত্রীবাহী ট্রেন পৌঁছতেই গমগমে চেহারায় ফিরল স্টেশন!
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন থেকেই পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনে দেশ জুড়ে ২০০ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। তার মধ্যে খড়্গপুরের উপর দিয়ে যাবে ৯ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন। তার মধ্যে ২ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন সোমবার খড়্গপুর রেল স্টেশনে দাঁড়ায়। তবে কোনও ট্রেনেই করোনা সতর্কতা বিধি পালনের তৎপরতা চোখে পড়েনি। শিকেয় উঠেছে সামাজিক দূরত্বও। মানা হয়নি রেলের বিধিও। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও যাত্রীবাহী ট্রেনে আসা ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য নিতে দেখা যায়নি। ট্রেনে ওঠা যাত্রীদের শুধু থার্মাল স্ক্যানিং দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদের অবশ্য দাবি, “ট্রেন থেকে যাঁরা নামছে তাঁদের সকলের বিস্তারিত নেওয়া হচ্ছে।”
এ দিন ভুবনেশ্বর-হাওড়া জনশতাব্দী খড়্গপুরে দাঁড়ায়। ওই ট্রেনে হাওড়া যাচ্ছিলেন আইআইটির কর্মী শেখ ওয়াহিদ। তাঁর আশঙ্কা, “ভেবেছিলাম ট্রেনে করোনা সতর্কতা বিধি কঠোরভাবে পালন হবে। তো তা দেখছি না। যেভাবে ট্রেন এসেছে তাতে একটু ভয় তো লাগছেই!” যাত্রীরা জানান, কানাইয়া সিংহ নামে একজন ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে বমি করছিলেন। খড়্গপুর স্টেশনে তাঁর চিকিৎসা করেন রেলের চিকিৎসক। ট্রেনে ওই যাত্রীকে অন্য যাত্রীর সঙ্গে গা-ঘেঁষেই যাত্রা করতে হয়েছে। কেন রেলের বেঁধে দেওয়া নিয়ম পালন করা হল না? রেলের সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরী বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল যাত্রীদের রেলের বিধি জানিয়ে দিতে। আমরা জানিয়ে দিয়েছি। প্রথম দিনে দু’টি ট্রেন খড়্গপুর দিয়ে যাতায়াত করেছে। মঙ্গলবার থেকে আরও কিছু ট্রেন যাতায়াত করবে। নিয়ম পালন হচ্ছে কি না নিশ্চয় দেখব।”
অনেকেই আবার আতঙ্কের মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারায় খুশিতে ছিলেন। নিতু গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, ‘‘চক্ষু হাসপাতালে কাজ করি। সম্বলপুরে আটকে ছিলাম। আমার বাড়ি কলকাতায়। এতদিন পরে কষ্ট করে হলেও যাত্রীবাহী ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পারায় আনন্দ হচ্ছে।”
তবে বাস পরিষেবা নিয়ে দেখা গিয়েছে সংশয়। এ দিন ভুবনেশ্বর থেকে খড়্গপুরে পৌঁছে বিএসএনএলের গ্রাহক পরিষেবার কর্মী শকুন্তলা পয়ড়্যা বলেন, “প্রায় তিনমাস কর্মস্থল ভুবনেশ্বর থেকে বেলদায় বাড়ি ফিরতে পারিনি। এ দিন ট্রেন বেলদায় দাঁড়ায়নি। তাই খড়্গপুরে নামলাম। বাস তো সেভাবে চলছে না। বেলদা যাব কীভাবে সেটাই ভাবছি।”