দূরত্ববিধি শিকেয়। সোমবার তমলুকে তৃণমূলের মিছিলে নিজস্ব চিত্র
করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তমলুক শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড-সহ হলদিয়া, পাঁশকুড়া পুরসভা এবং কয়েকটি ব্লকের গ্রামীণ এলাকাকে গণ্ডিবদ্ধ ঘোষণা করে লকডাউন কার্যকর করেছে প্রশাসন। লোকজনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু খোদ শাসক দলের বিরুদ্ধেই করোনার সতর্কতা বিধি উপেক্ষা করে তমলুক শহরে বড় মিছিল করার অভিযোগ উঠল। যা দেখে শহরবাসীর প্রশ্ন, কী ভাবে নিজেদের তৈরি নিয়ম নিজেরাই ভাঙে শাসক দল তথা তৃণমূল?
রাজ্য সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে তমলুক শহর তৃণমূল যুব কংগ্রেস ও জেলা আইএনটিটিইউসি-র উদ্যোগে সোমবার বিকেলে মিছিলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। এদিন মানিকতলা মোড় থেকে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তায় পাঁচশোরও বেশি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করেন তৃণমূল নেতারা। ভিড়ে ঠাসা মিছিলের সামনে ছিলেন শহর তৃণমূল যুব সভাপতি তথা পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর চঞ্চল খাঁড়া, জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি দিব্যেন্দু রায়, প্রাক্তন পুরপ্রধান পৃথ্বীশ নন্দী, পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়, চন্দন দে-সহ অন্যান্য ওয়ার্ডের সদস্য বিদায়ী কাউন্সিলর তথা ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটররা। এঁদের মধ্যে পৃথ্বীশ নন্দী (১৪ নম্বর ওয়ার্ড, দিব্যেন্দু রায় (১২ নম্বর ওয়ার্ড), ঝড়ুপদ বর্মন (৮ নম্বর ওয়ার্ড, চন্দন দে বর্মন (৭ নম্বর ওয়ার্ড) গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাসিন্দা।
গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাইরে মিছিল হলেও মিছিলে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁদের সচেতনতায় প্রশ্ন করছেন বাসিন্দারা। আরও অভিযোগ, মিছিলে সামাজিক দূরত্ব বিধির তোয়াক্কা না করেই তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হাঁটতে দেখা গিয়েছে। এই নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকাকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস। বিজেপির তমলুক নগর মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘সংক্রমণ রুখতে জেলা প্রশাসন নতুন করে এলাকা গণ্ডিবদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেখানকার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিষেধ রয়েছে। কিন্তু ওই সব এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সতর্কতা বিধি ভেঙে পুলিশের সামনেই মিছিল করলেন।’’ তমলুক শহর কংগ্রেসের নেতা শেখ জিয়াদের কথায়, ‘‘শহরের করোনা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। কিন্তু সরকারি নিষেধ অমান্য করে যে ভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকার কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক এবং নেতা এ দিন মিছিল করলেন, তাতে পুলিশ-প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানার ইচ্ছা রইল।’’
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূল যুব সভাপতি চঞ্চল খাঁড়ার দাবি, ‘‘গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাইরে মিছিল করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে সব রকম সতর্কতাই নেওয়া হয়েছে।’’ মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু রায়ের বক্তব্য, ‘‘আমার ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা গণ্ডিবদ্ধ হলেও আমার বাড়ি তার মধ্যে পড়ে না। আর গণ্ডিবদ্ধ এলাকা থেকে কোনও কর্মী-সমর্থককেও মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয়নি।’’