IPS

শ্রমিকদের পাশে সেই ইজরায়েল

দীর্ঘদিন বাংলা থেকে অনেক দূরে থেকেও ভুলে যায়নি নিজের প্রথম কর্মস্থলকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

তিনি আগে িছলেন আইপিএস। এখন আইপিএস তৈরি করেন। দীর্ঘদিন বাংলা থেকে অনেক দূরে থেকেও ভুলে যায়নি নিজের প্রথম কর্মস্থলকে।

Advertisement

লকডাউনে চেন্নাইয়ে আটকে পড়া ঝাড়গ্রাম জেলার ৪০ জন শ্রমিকের পাশে দাঁড়ালেন ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন মহকুমাশাসক তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলাশাসক আর এ ইজরায়েল। বুধবার তিনি নিজে ওই শ্রমিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

চেন্নাইয়ে আটকে যাওয়া ওই যুবকেরা ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। বেশির ভাগই দরিদ্র আদিবাসী। পেটের দায়ে মাস চারেক আগে চেন্নাইয়ের একটি গাড়ির গিয়ার তৈরির সংস্থায় কাজ করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। লকডাউনে সেই কোম্পানিতে তালা পড়েছে। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মজুরিও বন্ধ। সঙ্গে যা নগদ টাকা ছিল সবই প্রায় শেষ। এই পরিস্থিতিতে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁদের।

Advertisement

জামবনির চুটিয়া গ্রামের সঞ্জিত সিংহ, আকুল সিংহ, ঝাড়গ্রামের পাথরডাঙা গ্রামের রামজীবন সিংহ, অজয় সিংহ, বেলিয়াবেড়ার পাইকআম্বি গ্রামের প্রশান্তকুমার সিংহ-রা ফোনে জানালেন, বেসরকারি সংস্থাটি লকডাউনে তাঁদের দায়িত্ব নিতে চায়নি। এখন চেন্নাইয়ের আলপাক্কমের অষ্টলক্ষ্মীনগরে ওই সংস্থার দেওয়া একটি বাড়িতে গাদাগাদি করে রয়েছেন তাঁরা। সঞ্জিত সিংহ বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামের সমাজসেবী স্নেহাশিস ভকতের আদিবাড়ি জামবনির চুটিয়া গ্রামে। সেই সূত্রে স্নেহাশিসবাবুর সঙ্গে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল। স্নেহাশিসবাবুকে সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। তারপরেই ইজরায়েল সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।’’

কীভাবে?

পেশায় কৃষি দফতরের কর্মী স্নেহাশিস বলেন, ‘‘সমস্যার বিষয়টি জানার পরে কীভাবে ওই শ্রমিকদের কাছে সাহায্য পাঠাব ভেবে পাচ্ছিলাম না। কারণ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালেও তাঁরা তুলতে পারবেন না। এটিএম কার্ড নেই ওঁদের। এরমধ্যে খবর পাই ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন মহকুমাশাসক ইজরায়েল চেন্নাইয়েই থাকেন। তাঁর এক পরিচিতকে বিষয়টি জানাই। তারপরে ইজরায়েল সাহেব নিজেই ওই শ্রমিকদের একজনকে ফোন করেন।’’

আর এরন ইজরায়েল ২০০৪ ব্যাচের আইএএস। ২০০৬ সালে তাঁর প্রথম পোস্টিং ছিল তৎকালীন অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমার মহকুমাশাসক হিসেবে। ঝাড়গ্রাম মহকুমায় তিনিই প্রথম চালু করেছিলেন ‘আপনার দুয়ারে প্রশাসন’ কর্মসূচি। ২০০৮ সালে তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক হন। জঙ্গলমহলে তখন শুরু হয় মাওবাদী আন্দোলন। আচমকা ২০০৯ সালের মার্চে চাকরি ছেড়ে চেন্নাইয়ে ফিরে যান ইজরায়েল। পরে চেন্নাইয়ে আইএএস কোচিং অ্যাকাডেমি চালু করেন। এখন সেই অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর তিনি।

এ দিন চেন্নাই থেকে ফোনে ইজরায়েল বলেন, ‘‘আমার জীবনের প্রথম পোস্টিং ছিল ঝাড়গ্রাম। তাই ঝাড়গ্রামের মানুষজন চেন্নাইয়ে এসে খাদ্যের সঙ্কটে পড়েছেন জেনে ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। বৃহস্পতিবারই ওঁদের কাছে দশদিনের মতো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেব। তারপরেও লকডাউন না উঠলে ফের খাদ্যসামগ্রী পাঠাব।’’ লকডাউন উঠলে ওই শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন জঙ্গলমহলের প্রাক্তন এই আধিকারিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement