শালবনি ব্লকের ভাদুতলা ও কর্ণগড় গ্রামে দুয়ারে সরকার শিবির পরিদর্শন করলেন পরিবহণ দফতরের সচিব তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দুয়ারে সরকার শিবিরের পর্যবেক্ষক সৌমিত্র মোহন। নিজস্ব চিত্র
পা পড়ছে। তবে আরও বেশি পা ফেলতে হবে। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির ঘিরে এমন নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। অনেকটা যেন সভায় লোক ভরানোর মতো।
এ বারের ‘দুয়ারে সরকার’ ভিড় না কি প্রত্যাশিত নয়। ভিড় আরও বাড়াতে হবে, জেলা থেকে এমনই মৌখিক ফরমান দেওয়া হয়েছে ব্লকে ব্লকে, পুরসভাগুলিতেও। সূত্রের খবর, শিবিরে হাজিরার দিক থেকে অন্য কয়েকটি জেলার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর।
শিবিরে ভিড় কি প্রত্যাশিত হচ্ছে না? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের জবাব, ‘‘ভিড় হচ্ছে। বাড়ির কাছে কোথায় কবে শিবির বসছে, গ্রামে- শহরে তা আরও ভালভাবে প্রচারের কথা জানানো হয়েছে। ভাল প্রচার হলে নিশ্চিতভাবে ভিড় আরও বাড়বে।’’ দিনে শিবিরে কতজন এলেন (ফুটফল), সেই হিসেব রাখতে হয়। ব্লক থেকে রিপোর্ট জেলায় আসে। জেলা থেকে রাজ্যে পাঠাতে হয়। দিনের রিপোর্ট, দিনেই পাঠাতে হয়।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে শিবির হয় ১,৯১৮টি। সবমিলিয়ে এসেছেন ৫৩,৪২১ জন। অর্থাৎ, শিবিরপিছু এসেছেন ২৮ জন। ১৯ ডিসেম্বর ৫৪০টি শিবির হয়েছে। এর মধ্যে প্রচলিত ৪১৪টি, ভ্রাম্যমাণ ১২৬টি। সবমিলিয়ে এসেছেন ১৫,৯৬১ জন। শিবির পিছু হাজিরা ৩০। ১৫ ডিসেম্বর ৫৫৬টি শিবিরে এসেছেন ১৫,৮৩০ জন। এ দিন শিবির পিছু এসেছেন ২৮ জন। একটি ব্লকের এক কর্মী বলছেন, ‘‘এমনভাবে প্রচার করার কথা জানানো হয়েছে, যাতে ভিড় দ্বিগুণ হয়!’’
প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, এখন চাষের মরসুম। তাই খুব বেশি ভিড় হচ্ছে না। কোথাও ধান তোলার কাজ চলছে। কোথাও আলু লাগানোর কাজ চলছে। দিনমজুরির কাজে যুক্ত অনেকেও শিবিরে আসছেন না। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ফের শুরু হয়েছে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির। এ বার বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামে। সেখানে ভ্রাম্যমাণ শিবির হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে গ্রাম রয়েছে ৪,৯১৪টি। এর মধ্যে জনজাতি অধ্যুষিত গ্রাম ১,৩১৬টি যেখানে বাসিন্দাদের ৩০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা জনজাতি তালিকাভুক্ত।
বছর ঘুরলে লোকসভা ভোট। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, লোকসভা ভোটের আগে ‘পিছিয়ে পড়া’ এই সব গ্রামের মানুষের অভাব-অভিযোগ দূর করতে চাইছে তৃণমূল সরকার। এই দফায় ডিসেম্বর পর্যন্ত শিবির হবে। আবেদনকারীদের ২ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পরিষেবা প্রদান করতে হবে, এমনই নির্দেশ রয়েছে। জেলায় প্রায় ৫,৭০০টি শিবির হওয়ার কথা। এর মধ্যে ভ্রাম্যমান শিবির প্রায় ১,৬০০টি। সব মিলিয়ে ৩৬টি পরিষেবা পাওয়ার আবেদন জানানোর সুযোগ রয়েছে। জেলার প্রতিটি অঞ্চলে, প্রতিটি ওয়ার্ডে শিবির হবে। কোথায়, কেমন শিবির হচ্ছে, তা দেখতে জেলা থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছেই। যাচ্ছেন এডিএম, এসডিও, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রমুখ। কোথায় কোন প্রকল্পে, কতগুলি আবেদন এল, শিবির শেষে রোজ তার পর্যালোচনা করতে হবে, এমনই নির্দেশ রয়েছে। পরিদর্শন রিপোর্ট জেলায় জমা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্নের নির্দেশে জেলায় জেলায় পরিদর্শনে আসছেন সিনিয়র আইএএস অফিসারেরাও। ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বে রয়েছেন সৌমিত্র মোহন এবং পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকী। ঘাটাল ও খড়্গপুর মহকুমার দায়িত্বে পারভেজ। মেদিনীপুর (সদর) মহকুমার ক্ষেত্রে সৌমিত্র। শিবির পরিদর্শনে বুধবার মেদিনীপুরে আসেন পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন। শহরের পাশাপাশি শালবনিতে গিয়েও শিবির পরিদর্শন করেছেন তিনি।
রাজনৈতিক চাপানউতোরও অব্যাহত। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘যত মানুষ শিবিরে আসেন বলে দাবি করা হয়, তত আসেন কি না সন্দেহ! সব জল মেশানো রিপোর্ট!’’ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘সাধারণ মানুষের সুবিধার্থেই এই শিবির। এমন শিবিরের ফলে অনেক মানুষ উপকৃত হন।’’