গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি বিজেপি নেতাদের

গত অগস্ট মাসে দলের তমলুক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করে নতুন জেলা সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। তমলুক জেলার সভাপতি হিসেবে নবারুণ নায়েক ও কাঁথি জেলার সভাপতি হিসেবে অনুপ চক্রবর্তী দায়িত্ব পান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিপুল সাফল্যের পাশাপাশি তৃণমূলের শক্তঘাটি পূর্ব মেদিনীপুরেও শক্তি বৃদ্ধি ঘটেছিল বিজেপির। লোকসভা ভোটের পরে জেলায় দলে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ভাল সাড়া মিলেছিলে।

Advertisement

গত অগস্ট মাসে দলের তমলুক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করে নতুন জেলা সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। তমলুক জেলার সভাপতি হিসেবে নবারুণ নায়েক ও কাঁথি জেলার সভাপতি হিসেবে অনুপ চক্রবর্তী দায়িত্ব পান। কিন্তু দলের মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন ঘিরে নবারুণের বিরুদ্ধে কারচুপি এবং টাকার বিনিময়ে দলে পদ বণ্টনের অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। দলের জেলা কার্যালয়ে নবারুণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান বিভিন্ন ব্লকের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। গত ২৬ নভেম্বর, মঙ্গলবার তমলুক জেলার ৪০ জন মণ্ডল সভাপতির তালিকা প্রকাশের পরেও বৃহস্পতিবার তমলুকে জেলা বিজেপির অফিসে ফের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান ও তাঁর পদত্যাগের দাবি তোলেন বিভিন্ন ব্লকের নেতা-কর্মীরা। শুধু তাই নয়, শুক্রবার বিজেপির তমলুক জেলা কমিটির তিন সহ-সভাপতি, একজন জেলা সাধারণ সম্পাদক ও পাঁচজন সম্পাদক সহ ৯ জন জেলা পদাধিকারী জেলা সভাপতি নবারুণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, দলের বহু পুরনো সক্রিয় ও যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন এবং জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে নিয়েই জেলা কমিটি গঠন করা হয়। যে ভাবে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মকর্তা ও বুথ সভাপতিদের মতামত অগ্রাহ্য করে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন করা হল তাতে বেশিরভাগ কর্মকর্তা হতাশ।

জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দেওয়ার ঘটনায় বিজেপির জেলা নেতৃত্বের কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলের একাংশের মতে, সদ্য তিনটি বিধানসভা উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের হারের জেরে এমনিতেই দলীয় কর্মীরা হতাশ। এই পরিস্থিতিতে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন ঘিরে প্রকাশ্য কোন্দল জেলায় দলের সংগঠনকে আরও দুর্বল করবে।

Advertisement

দলীয় পদ থেকে সরতে চেয়ে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ৯ জন নেতার চিঠি প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এই নিয়ে মন্তব্য করব না।’’ আর নবারুণে দাবি, ‘‘এরকম কোনও চিঠির কথা জানা নেই। তবে গণতান্ত্রিক ভাবে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারেন। দলের সংগঠনিক নির্বাচন ঘোষণার দিন থেকে জেলা কমিটির কোনও পদে নেই। কেবল কার্যনির্বাহী জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তাই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কোন বিষয় নেই।’’

তবে জেলা সভাপতি (তমলুক) নবারুণ দলে কোন্দলের বিষয়টি মানতে না চাইলেও এদিন তার জেরেই পাঁশকুড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয়ে তমলুক সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন দলের বিক্ষুব্ধরা। দলের একাংশের মতে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন ঘিরে দলে ক্ষোভ রয়েছে। তার উপর বৃহস্পতিবার রাজ্যের তিনটি উপ নির্বাচনে বিজেপির শোচনীয় হারের পর নেতৃত্বের উপুরে সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ দিন পাঁশকুড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয়ে তমলুক সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে মিটিং চলছিল। মিটিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল পাঁশকুড়ার রাধাবল্লভচক, হাউর ও রঘুনাথবাড়ির মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন ঘিরে বিবাদের মীমাংসা। দলীয় সূত্রে খবর, মিটিং চলাকালীন সেখানে হাজির হয় প্রায় তিনশো বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী। এক সময় কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। বিক্ষুব্ধরা বাবলু মণ্ডল নামে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। যদিও বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের দাবি, ‘‘দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে আলোচনার সময় সামান্য গোলমাল, হাতাহাতি হয়েছে। পরে বিক্ষুব্ধদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement