—ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু পর্বের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেদিনীপুর সফর। মেদিনীপুরে মমতা ছিলেন প্রায় ৪২ ঘন্টা। জনসভা করেছেন। সভায় ভিড়ও হয়েছে। সভার ভিড় দেখে উজ্জীবিত জেলা তৃণমূল। দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক দফায় সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা সেরেছেন দলনেত্রী। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে দলের অন্দরে আওয়াজ উঠছে আরও আন্দোলনের। আন্দোলন কর্মসূচির পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব।
ধাক্কাটা এসেছিল গত পঞ্চায়েত ভোটে। পরে লোকসভা ভোটে ফাটল আরও চওড়া হয়। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ে তৃণমূল। পশ্চিম মেদিনীপুরে বিধানসভার আসন ১৫টি। লোকসভার নিরিখে এরমধ্যে ৭টিতে এগিয়ে বিজেপি। বাকি ৮টিতে তৃণমূল। এই ৮টি আসনের মধ্যে আবার একাধিক আসনে কোনও রকমে ‘লিড’ ধরে রেখে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে জোড়াফুল- শিবির। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, লোকসভার সময়ের পরিস্থিতি এখন আর নেই। দল যে এই সময়ের মধ্যে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বুথস্তরে সংগঠন গুছিয়েছে, তার প্রমাণ হিসেবে মেদিনীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার ভিড়কে সামনে আনছেন তাঁরা। নেতৃত্বের আরও দাবি, তৃণমূলকে আরও চাঙ্গা ও সাহস জোগানোর বীজ মেদিনীপুরের জনসভায় রোপন করে গিয়েছেন দলনেত্রী!
সাংসদ মানস ভুঁইয়ারও দাবি, ‘‘এই ভরা সভা দেখে দলের সকলেই উজ্জীবিত হয়েছেন।’’ দলের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রথমত, গত পঞ্চায়েত এবং লোকসভায় ‘অপ্রত্যাশিত’ ফলের পর যাঁরা তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, সভায় তাঁদের অনেকেরই দেখা মিলেছে। দ্বিতীয়ত, প্রচুর যুবককেও সভায় দেখা গিয়েছে। সকলেই সভার শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে দলনেত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। তৃতীয়ত, সভায় ‘দাদার অনুগামী’ বলে পরিচিত অনেকেও এসেছেন।
ভরা সভা থেকে আশাবাদী জেলা তৃণমূলের নেতারা। আর এই মনোভাব ধরে রাখতে তাঁরা আরও কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন। দলীয় সূত্রে খবর, ২- ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলা জুড়ে কয়েকটি সভা করার পরিকল্পনা ছিল তৃণমূলের। প্রস্তুতিও সারা হচ্ছিল। পরে মেদিনীপুরের জনসভার জন্য সেই কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। এ বার ফের সেই কর্মসূচি শুরুর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, একুশের ভোটের আগে দলকে আরও আন্দোলনমুখী করতে চান তৃণমূলনেত্রী। তাই শুভেন্দুপর্বের মধ্যেই মেদিনীপুর সফরে এসেছিলেন তিনি। জেলা নেতৃত্বও সেই পথে এগিয়ে সংগঠনের নিচুতলায় ঝাঁকুনি আনার চেষ্টা করছেন। জেলার ১৫টি বিধানসভা আসনের মধ্যে এখন সবক’টিই তৃণমূলের দখলে। আগামী বিধানসভা ভোটেও জেলার সবক’টি আসন দখলের লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছে শাসক দল। সম্প্রতি মেদিনীপুরে দলের এক সভায় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে বলতেও শোনা গিয়েছে, ‘‘আমার যদি বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে থাকে, তা থেকে বলতে পারি, আগামী নির্বাচনে জেলার ১৫টি আসনের মধ্যে আমরা ১৫টিতেই জয়লাভ করব।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতিরও দাবি, ‘‘দিদিকে আমরা জেলার ১৫টি আসনই উপহার দেব।’’
দলের এক সূত্রের বক্তব্য, শুভেন্দুপর্বের মধ্যে এই জনসভা হয়েছে। সভায় এত ভিড় হয়েছে। এটাই সবথেকে ইতিবাচক বিষয়! বস্তুত, কিছুক্ষণের জন্য হলেও সোমবার সভাস্থলের আশেপাশের এলাকা চলে গিয়েছিল ঘাসফুলের পতাকার দখলে। জনসভা কি ইঙ্গিত দিয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর? বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের খোঁচা, ‘‘ওদের আর ঘুরে দাঁড়াতে হবে না! তৃণমূলের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে!’’