তিন কিমি হেঁটে জল

রোজ সকাল হলে তিন কিলোমিটার হেঁটে জল আনতে যান দৈবকী নন্দী। ৮২ বছরের জীবনে কোনও পরিবর্তন নেই। তবে তেমন কোনও প্রয়োজন ছিল না।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০০:২৮
Share:

হাঁড়ি -মাথায়। জলের খোঁজে। বেলপাহাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

রোজ সকাল হলে তিন কিলোমিটার হেঁটে জল আনতে যান দৈবকী নন্দী। ৮২ বছরের জীবনে কোনও পরিবর্তন নেই। তবে তেমন কোনও প্রয়োজন ছিল না। স্বজনহীন ওই বৃদ্ধার গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অন্তত সাতটি টাইম কল রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য একটিতেও জল পড়ে না। গণ্ডাপাল গ্রামের অপর্ণা রানা, ছন্দা রানা, সরস্বতী মুর্মুরাও ভোরবেলা হাঁড়ি, কলসি, বালতি নিয়ে ছোটেন বেলপাহাড়িতে। শুধু বধূরা নন, ছোটে তাঁদের কচিকাঁচারাও। এটাই দস্তুর।

Advertisement

সবে ফাল্গুন মাস। এর মধ্যেই বেলপাহাড়ি ব্লক সদরের কাছাকাছি গ্রামগুলিতে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই সব গ্রাম এবং সদর ব্লকে পানীয় জল সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। তারাফেনি জলাধার থেকে জল নিয়ে পরিশোধন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে জল সরবরাহ করার কথা। কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ কিছু কলে নিয়মিত জল মেলে না।

অশীতিপর বৃদ্ধা দৈবকী নন্দী বলেন, “এই বয়সে এতটা পথ গিয়ে জল নিয়ে আসতে কালঘাম ছুটে যায়। বুক ধড়ফড় করে। কী যে উন্নয়ন হচ্ছে বুঝতে পারছি না।” বালতি, হাড়ি, কলসিতে জল ভরে নিয়ে ফিরছিলেন জয়ন্তী রানা, সরস্বতী মুর্মু। তাঁরাও জানালেন, বেলপাহাড়ির কলে জল আনতে গেলে সেখানকার বাসিন্দারা বিরক্ত হন। প্রায়ই বচসা হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া সুস্মিতা শেঠ, জ্যোর্তিময় নন্দীরা জানায়, মায়েরা অনেক কষ্ট করে জল নিয়ে আসে। সেই জল বোতলে করে তাঁরা মিড মিল খাওয়ার জন্য স্কুলে নিয়ে যায়। কারণ স্কুলেও জল মেলে না। সুস্মিতারা বলে, “আমরা মেপে জল খাই। নষ্ট করি না। জলের অপর নাম জীবন।” সেই জীবনের জন্য ঘুরে মরছেন গণ্ডপালের বাসিন্দারা।

Advertisement

ওই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিত্য ব্যবহার্য জলেরও অভাব রয়েছে ওই গ্রামে। বেশির ভাগ নলকূপই অকেজো। যে দু’টি সচল রয়েছে তারও অবস্থা খারাপ। কারণ গরম পড়তে না পড়তেই নামতে শুরু করেছে জলস্তর। ঘোলা দুর্গন্ধযুক্ত জল উঠে। সে জল জল মুখে দেওয়া দূর জলে স্নান করাও যায় না। ভরসা বলতে স্থানীয় একটি দিঘি। কিন্তু সেচের জলও বড় বালাই। চাষিরাও তাই পাম্প দিয়ে ওই দিঘির জল তুলে জমিতে সেচের কাজ সারেন। ফলে টান প়ড়ে সেখানেও।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুমিত্রা মুর্মু এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য দু’জনেই কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত। ফলে, বিরোধী এলাকা হওয়ায় পানীয় জলের সমস্যার সুরাহা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাং‌শও। সুব্রতবাবু বলেন, “জল নিয়েও রাজনীতি করা হচ্ছে। বহুবার সমস্যার কথা জানিয়েছি।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ঝাড়গ্রাম উপভুক্তির সহ-বাস্তুকার সুবীর ঘোষ অবশ্য বলেন, “পাইন লাইনের সমস্যায় কিছু এলাকায় জল পৌঁছচ্ছে না। গরমের আগে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement