গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি পঞ্চায়েতে মদের দোকান খোলার জন্য আবগারি দফতরকে উদ্যোগী হতে বলেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এই মদের দোকান খোলার প্রতিবাদে রাজ্য-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে একাধিকবার। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন ময়না। আবগারি দফতরের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও এক ব্যক্তিকে মদের দোকান খুলতে দিলেন না তিলখোজা গ্রাম পঞ্চায়েতের চংরা গ্রামের বাসিন্দারা। শুক্রবার এ নিয়ে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে, পুলিশ গিয়ে ওই দোকানের মালিককে উদ্ধার করে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, চংরা গ্রামের শীতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকশ মিটার দূরেই নিজের বাড়ির সংলগ্ন এলাকায় মদ দোকান খোলার জন্য আবগারি দফতরের অনুমোদন পেয়েছেন অর্পিতা বেরা মাইতি। অর্পিতার স্বামী সুভাষ মাইতি পেশায় স্বর্ণ ব্যসবায়ী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই মদের দোকান চালু হয়। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুক্রবার সকালে মহিলা-সহ গ্রামের বাসিন্দারা ওই মদ দোকানের সামনে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে যায় ময়না থানার পুলিশ। তারা সুভাষকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ক্ষুদ্ধ বাসিন্দারা পরে তিলখোজা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করেও বিক্ষোভ দেখান।
বিক্ষোভকারী গ্রামবাসী শুকদেব শাসমল, প্রতিমা শাসমলেরা বলেন, ‘‘এলাকায় দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। ৭০০ মিটার দূরে হাইস্কুল রয়েছে। এমন এলাকায় মদ দোকান খোলা হলে অসামাজিক কাজ বৃদ্ধি পাবে।’’ এই মদ দোকান খোলা নিয়ে উঠে এসেছে সম্প্রতি খুন হওয়া গড় ময়নার যুবক সোমনাথ বেরার প্রসঙ্গ। চাংরা গ্রামের পাশেই রয়েছে খেজুরতলা বাজার। সেখানে একটি মদের দোকান রয়েছে। এ দিনের বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মৃত সোমনাথ এবং ঘটনায় ধৃত অভিযুক্তেরা খেজুরতলার ওই মদের দোকান থেকেই মদ কিনেছিল। মদ্যপানের পরে ওই অপরাধ ঘটেছে বলে অভিযোগ। শ্যামসুন্দর দাস নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘এখান থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার খেজুরতলা বাজারের দোকান থেকে মদ কিনে পানের পর এক যুবককে খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাই এখানের মদ দোকান অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’’
মদ দোকান খোলা এবং বিক্ষোভ প্রসঙ্গে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রেহানা বেগম বলেন, ‘‘চংরা গ্রামে মদ দোকান খোলার জন্য পঞ্চায়েতকে কিছু জানানো হয়নি। এখান থেকে এ নিয়ে ট্রেড লাইসেন্সও দেওয়া হয়নি। পঞ্চায়েতের অনুমতি ছাড়া মদ দোকান চালু করা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছি।’’ পাশাপাশি রেহানার বক্তব্য, ‘‘এলাকায় একাধিক স্কুল এবং বসত বাড়ি রয়েছে। গ্রামের ভিতরে মদের দোকান খোলায় বাসিন্দারা আপত্তি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ওঁদের আপত্তিকে আমরা সমর্থন করছি।’’
স্থানীয় তৃণমূলের নেতা তথা জেলা পরিষদের কৃষি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শেখ সাজাহান আলি বলেন, ‘‘আবগারি দফতর মদ দোকান খোলায় অনুমোদন দেওয়ার আগে পঞ্চায়েতকে কিছু জানায়নি। সরকারি নিয়মানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে মদ দোকান খোলার অনুমোদন দেওয়া হয় না। ওই মদ দোকান থেকে একটি প্রাথমিক স্কুলের দূরত্ব খুব কম। বাসিন্দাদের আপত্তির বিষয়ে আবগারি দফতর-প্রশাসনের কাছে জানানো হবে।’’
জেলা আবগারি দফতরের সুপার মানিক সরকার বলেন, ‘‘ময়নার চংরা এলাকায় বিক্ষোভের ঘটনা নজরে এসেছে। নিয়মমতো স্কুল থেকে মদের দোকান এক হাজার ফুটের বাইরে করতে হয়। ওই মদের দোকান স্কুল থেকে এক হাজার ফুটের বাইরেই রয়েছে। সব কিছু খতিয়ে দেখে ওখানে মদের দোকানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’