Shooting

ঝাড়গ্রামে শ্যুটিং, আশায় ব্যবসায়ীরা  

উত্তম কুমার অভিনীত মরুতীর্থ হিংলাজ থেকে হাল আমলের আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনীত দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন—গত ছয় দশকে দু’ডজনেরও বেশি বাংলা ছবির শ্যুটিং হয়েছে ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৪
Share:

—প্রতীকী ছবি

ফের ‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনে’র শব্দ শোনা গেল জঙ্গলমহলে।

Advertisement

শীতের ঝাড়গ্রামে টানা শ্যুটিং হয়ে গেল একটি বাংলা সিনেমার। পরিচালক শৈলিক ভৌমিক তাঁর নতুন ছবি ‘বার্নিং বাটারফ্লাইজ’-এর জন্য বেছে নিয়েছিলেন চিল্কিগড় রাজপ্রাসাদকে। পুরনো আমলের প্রাসাদটিকে ছবির প্রয়োজনে দুর্গের আদলে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। ঝাড়গ্রামে ফের বাংলা ছবির শ্যুটিং শুরু হওয়ায় উৎফুল্ল পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশা, ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় টানা শ্যুটিং চললে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। স্থানীয় অর্থনীতিতেও সদর্থক প্রভাব পড়বে।

উত্তম কুমার অভিনীত মরুতীর্থ হিংলাজ থেকে হাল আমলের আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনীত দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন—গত ছয় দশকে দু’ডজনেরও বেশি বাংলা ছবির শ্যুটিং হয়েছে ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। উত্তম কুমার অভিনীত সত্তরের দশকের সন্ন্যাসী রাজা, বাঘবন্দি খেলা ও রাজবংশ ছবির দৃশ্যগ্রহণ হয়েছিল ঝাড়গ্রাম রাজপ্রাসাদে। সন্দীপ রায়ের টিনটোরেটোর যিশু সিনেমায় আস্ত ঝাড়গ্রাম রাজপ্রাসাদটাকেই নিয়োগী বাড়ি হিসেবে দেখানো হয়েছিল। বাদশাহী আংটি-র শেষ দৃশ্যে যেখানে ফেলুদা-তোপসেকে একটি জঙ্গলের মাঝে কাঠের ঘরে বন্ধ করে বিষাক্ত সাপ ছেড়ে দিয়েছিলেন বনবিহারীবাবু, সেটি ছিল কলাবনির জঙ্গল। সত্তরের দশকের শেষের দিকে চিন্ময় রায় অভিনীত টেনিদা-কাহিনী ‘চারমূর্তি’ ছবির বেশির ভাগ অংশের দৃশ্যগ্রহণ হয়েছিল বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরের জঙ্গলে ও বন বাংলোয়। হাল আমলের দুর্গেশগড়ের গুপ্তধনের দৃশ্যগ্রহণও হয়েছিল ঝাড়গ্রাম ও চিল্কিগড় রাজপ্রাসাদে। এছাড়াও বেহুলা লখীন্দর, অরুন্ধতী, আমার মায়ের শপথ, ব্রেক ফেল, মেঘনাদ বধ রহস্যের মতো বেশ কিছু ছবির শ্যুটিং হয়েছে এখানে।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম জেলায় রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহাড়, টিলা, জঙ্গল, নদী, প্রাচীন পুরাকীর্তি, কয়েকটি প্রাচীন রাজবাড়ি ও জমিদার বাড়ি। এমন জায়গায় কম খরচে শ্যুটিং করার সব রকম উপাদান মজুত রয়েছে। তাই আরও অনেক বেশি সিনেমার শ্যুটিং এখানে হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এই নিয়ে সরকারি তরফেও তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ঝাড়গ্রামের ভূমিকন্যা সাঁওতালি অভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড রাজ্যে কোনও এলাকায় শ্যুটিং করা হলে সেখানকার রাজ্য সরকারের তরফে ছবির প্রোডাকশনকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হয়। ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রেও তেমন উদ্যোগ নেওয়া হলে এখানে শ্যুটিং করার ব্যাপারে ছবির প্রযোজক সংস্থাগুলি আগ্রহী হবেন।’’ কিন্তু সেটা সেভাবে হচ্ছে না। সদ্য শ্যুটিং হওয়া ছবিটির প্রোডাকশন হেড আকাশ ভৌমিকের ক্ষোভ, ‘‘ইউনিটের লোকজনকে এবং অভিনেতাদের রাখার জন্য ঝাড়গ্রামে টানা ঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হয়েছে। প্রশাসনের থেকে তেমন সাহায্য পেলাম কই!’’

ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার, পর্যটন ব্যবসায়ী কুন্তল দে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে অশান্তির সময়েও ২০০৬ সালে এখানে টিনটোরেটোর যিশু ছবির শ্যুটিং হয়েছে। এখন তো ঝাড়গ্রামে কোনও সমস্যা নেই। বেশি করে ছবির শ্যুটিং হলে পর্যটন পেশার সঙ্গে যুক্ত সকলেই উপকৃত হবেন।’’ মাস ছয়েক আগে দলীয় কর্মসূচিতে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য নেতা তথা অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। ঝাড়গ্রামের স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানগুলি বাংলা সিনেমায় ব্যবহারের জন্য তাঁর কাছে আবেদন জানান পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশ। ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম সংস্থার কর্তা সুমিত দত্তেরা এখানে ফিল্ম ট্যুরিজম প্যাকেজও শুরু করেছেন। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি অবশ্য বলছেন, প্রোডাকশন ইউনিট থেকে বিভাগীয় দফতরে যোগাযোগ করলে অবশ্যই অনুমতি ও সহযোগিতা করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement