প্রতীকী ছবি।
গত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ক্ষতি করেছিল আমন ধান, আনাজ ও ফুলচাষের। শীতকালীন বিভিন্ন আনাজ চাষে সেই ক্ষতির জেরে বাজারে দামও চড়ে গিয়েছে। বস্তুত আনাজের আগুন দামে গৃহস্থের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। নাজেহাল গৃহস্থ যখন দাম কমার আশায় ঠিক তখনই ফের অসময়ের বৃষ্টি কপালে ভাঁজ ফেলেছে আনাজ চাষিদের। সেই সঙ্গে আনাজের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কায় গৃহস্থ।
বুলুবুলের বিপুল ক্ষতি সামাল দেওয়ার আগে পশ্চিমী ঝঞ্জার জেরে শুক্রবার সকাল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়েই বৃষ্টি চলেছে। ফলে জেলার সর্বত্র ফের ক্ষতির মুখে পড়েছে শীতকালীন শাক, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, বেগুন ও মুলো-সহ বিভিন্ন আনাজের চাষ। ক্ষতির আশঙ্কা ফুলচাষেও। জেলা কৃষি ও উদ্যানপালন দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল থেকে তমলুক, নন্দকুমার, মহিষাদল, হলদিয়া, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, কাঁথি, এগরা সর্বত্র হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শীতের কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে মেঘলা আবহাওয়া আর বৃষ্টির জেরে জেলাজুড়ে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত। সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও সাধারণ মানুষ ও পড়ুয়াদের অনেকেই বাড়ির বাইরে বের হননি। বৃষ্টির জেরে চাষের জমিতে জল জমে ফের আনাজ চাষের ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ফুলচাষিরা।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, অকাল বৃষ্টিতে আলু খেতে নাবিধসা রোগের আক্রমণের সম্ভবনা রয়েছে। এতে আলুর ফলন মার খওয়ার আশঙ্কা। এ ছাড়াও শীতকালীন পালং, পুঁই, খসলা শাক, বেগুন, পটল, কুমড়ো, বরবটি, কুদরি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি প্রভৃতি আনাজ চাষেরও ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলা কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা (শস্য সুরক্ষা) মৃণালকান্তি বেরা বলেন, ‘‘হাল্কা বৃষ্টি হলেও দীর্ঘক্ষণ ধরে বৃষ্টি চলায় খেতে জল জমে আলু চাষের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। নাবিধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও শীতকালীন আনাজ চাষের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। আনাজ খেতে যাতে জল জমতে না পারে ও রোগপোকার আক্রমণ না হয় সেজন্য কৃষকদের সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’
জেলা কৃষি ও উদ্যানপালন দফতর সূত্রে খবর, এগরা, পটাশপুর, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, মহিষাদল, হলদিয়া ও নন্দীগ্রাম ব্লকে ব্যাপক আনাজ চাষ হয়ে থাকে। অকাল বৃষ্টির জেরে এইসব এলাকায় আনাজ চাষে ক্ষতির ফলে কৃষকদের সমস্যার পাশাপাশি বাজারে আনাজের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাঁশকুড়ার কালিদান গ্রামের বেগুন চাষি ভরত মান্না, হরিপদ মাজি বলেন, ‘‘সকাল থেকে নাগাড়ে বৃষ্টিতে বেগুন খেতে জল জমতে শুরু করেছে। এতে বেগুনগাছের গোড়া পচে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খুবই সমস্যায় পড়েছি।’’
চিন্তা বেড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কারণ গত নভেম্বর মাসে বুলবুলের জেরে বাজারে আনাজের দাম এমনিতেই চড়া। তার উপর এমন বৃষ্টিতে ফের আনাজ চাষের ক্ষতি হলে বাজারে দাম আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে মিড-ডে মিলের খরচ কী ভাবে সামাল দেবেন তা ভেবেই চিন্তিত একাধিক স্কুলের শিক্ষিক-শিক্ষিকারা। এই অবস্থায় মিড-ডে মিলের জন্য সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিও তুলেছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপ ভৌমিক বলেন, ‘‘গত বছর জুলাই মাস থেকে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ৪ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে মাত্র ১৩ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪৮ পয়সা করা হয়েছে। কিন্তু নভেম্বর মাসে বুলবুলের পর থেকে বাজারে আনাজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জেরে মিড-ডে মিল চালাতে খুবই অসুবিধায় পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকরা। তাই মিড-ডে মিলের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।’’