কীভাবে আসছে, তা ঘিরে ধোঁয়াশা

ব্যবহারের পর স্যালাইন খোলা বাজারে

ব্যবহৃত স্যালাইনের বোতল বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য হিসাবে নষ্ট করার বদলে বিক্রি করা হচ্ছে খোলা বাজারে— পটাশপুর এবং এগরা পুরসভা এলাকায় এমনই অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

এগরা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

ব্যবহৃত স্যালাইনের বোতল বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য হিসাবে নষ্ট করার বদলে বিক্রি করা হচ্ছে খোলা বাজারে— পটাশপুর এবং এগরা পুরসভা এলাকায় এমনই অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বোতলগুলি ওজনদরে বিক্রি করে মুনাফা লোটার চেষ্টা করছেন। এর ফলে ওই সব বোতল থেকে বিভিন্ন রোগের জীবাণু এবং সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

পটাশপুরে এবং এগরা পুরসভা এলাকায় সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে একাধিক হাসপাতাল এবং এবং চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সেই সব হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের উৎপন্ন হওয়া বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলির নির্দিষ্ট এলাকায় ফেলাই নিয়ম। ওই স্থান থেকে নির্দিষ্ট সংস্থা বর্জ্যগুলি নিয়ে গিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে নষ্ট করে ফেলে। কিন্তু এগার মহকুমার বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, একাধিক নার্সিংহোম থেকেই স্যালাইনের খালি বোতল বাজারে ওজন দর বিক্রি করা হচ্ছে। এগরায় রাস্তায় হামেশাই ওই বোতল নিয়ে ভ্যান রিকশাকে যেতে দেখা যাচ্ছে।

বাতিল এবং নোংরা প্লাস্টিক কেনে, এমন গুদামের এক কর্মী বলেন, ‘‘প্রতিদিন একাধিক জায়গা থেকে বস্তা ভর্তি স্যালাইনের খালি বোতল আসে। আমরা খালি হাতেই সেগুলি অন্য সামগ্রী আলাদা করি। পরে তাকে মেশিনে গলিয়ে প্লাস্টিকের গুটি বানানোর পরে আবার কলকাতার কারখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মীর কথায়, ‘‘বোতলগুলি এবং চ্যানেলর জীবাণু থাকতে পারে তা জানতাম না। তা থেকে আমাদের শরীরে রোগ সংক্রমণ হতে পারে সে বিষয়টিও জানা

Advertisement

ছিল না।’’

কিন্তু কোথা আসছে ওই বোতল? সেই প্রশ্নের জবাবে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ওই গুদাম কর্মী। এগরার একাধিক হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে এ নিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রায় সকলেই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সহকারী সুপার রাকেশ জানা এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘হাসপাতালের বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। হলদিয়ার এক সংস্থা এসে প্রতিদিন গাড়িতে করে ওই বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এখানে কোনও রকম অনিয়ম

হয় না।’’

এগরার এক নার্সিংহোম মালিকেরও দাবি, ‘‘বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নষ্ট করার জন্য সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। তবেই নার্সিংহোমের খোলার অনুমতি মেলে। আমাদের এখানে অনিয়ম হয় না।’’ হলদিয়ার যে সংস্থা জেলায় ওই সব বর্জ্য সংগ্রহ করে, তার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী এগরা মহকুমার সরকারি এবং বেসরকারি নার্সিংহোমগুলির বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়মিত সংগ্রহ করা হয়। কেউ সেলাইনের বোতল বাইরে বিক্রি করছেন কি না, তা জানা নেই।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের ‘জেলা নার্সিংহোমে ওয়েলফেয়ার অ্যসোশিয়েশনে’র সম্পাদক কানাইলাল দাসের কথায়, ‘‘একটি বেসরকারি সংস্থা নিয়মিত নার্সিংহোমের বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে যায়। যদি কোনও নার্সিংহোম এবং প্যাথলজি কেন্দ্রগুলি গোপনে এই ধরনের বেআইনি কাজ করে, তার প্রমাণ পেলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’

গোটা ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশে সকল হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোম সেই নির্দেশিকা অমান্য করলে পদেক্ষেপ করা হয়। এগরা মহকুমার কোথায় এই ধরনের বেআইনি কাজ চলছে, সেই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement