দিঘা উপকূলের গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছে বহু নির্মাণ। দিঘা মোহনার কাছে। —নিজস্ব চিত্র।
কোজাগরী পূর্ণিমার কটালের জলোচ্ছ্বাসে সম্প্রতি পরপর দুদিন ভেসেছে সৈকত শহর। আগেও ইয়াস থেকে আমপান— ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতি হয়েছে। বারবার জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতি হলেও উপকূল জুড়ে বেআইনি নির্মাণ চলছেই। দিন যত যাচ্ছে, ওই নির্মাণের সংখ্যা ততই বাড়ছে। তাই নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় এলেই জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২১ সালের মে মাসে ইয়াস ঝড়ের প্রভাবে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে তছনছ হয়ে গিয়েছিল দিঘা। সৈকত লাগোয়া বাঁধানো পাড়, সৌন্দর্যায়ন, হোটেল, লজেও ক্ষতি হয়েছিল সে সময়। তবুও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। সমুদ্রের গা ঘেঁষে বহুতল নির্মাণ চলছেই। কোথাও সরকারি উদ্যোগে, আবার কোথাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে। বালিয়াড়ি আর ঝাউ জঙ্গল কেটে দিঘা কার্যত কংক্রিটে মুড়ে ফেলা হচ্ছে। যাত্রানালার কাছে গড়ে উঠেছে ঢেউসাগর পার্ক। দিঘা মোহনা মাছ নিলাম কেন্দ্রের পিছনে সার দিয়ে উঠেছে বহুতল। স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা সরকারি জমিতে কোনও অনুমতি ছাড়াই ওই সব নির্মাণ কাজ করেছে বলে অভিযোগ। তাজপুর এবং মন্দারমণিতেও সৈকতের ধারে অবাধে বহুতল হোটেল এবং লজ নির্মাণ।
উপকূলের এই সব কংক্রিটের নির্মাণের উপরে কতটা প্রভাব ফেলবে ‘দানা’, তা নিয়ে শঙ্কিত পরিবেশপ্রেমীরা। পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ সমিতির কর্মকর্তা তথা পরিবেশপ্রেমী প্রীতিরঞ্জন মাইতি বলছেন, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে এমনিতেই সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপর গত কয়েক বছরে নিম্নচাপ এবং বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ও বেড়েছে। স্বাভাবিক কারণে জলোচ্ছ্বাসও বেড়েছে। সমুদ্র যেখানে যেখানে কংক্রিটের নির্মাণে বাধা পাচ্ছে, তার ঠিক কিছু দূরে বঙ্গোপসাগর আগ্রাসী রূপ ধারণ করে জনবসতি এলাকার দিকে এগিয়ে আসছে। আগামী দিনে উপকূল এলাকায় বহুতল নির্মাণ বন্ধ করতে না পারলে সমূহ বিপদ।’’
উল্লেখ্য, উপকূল এলাকায় সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা চলাকালীন যতদূর ঢেউ এসে পৌঁছয়, সেখান থেকে ৫০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত কোনও নির্মাণ কাজ করা যায় না। সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কোস্টাল রেগুলেটেড জ়োন আইন রয়েছে। তবে সেই আইন মানা হচ্ছে না। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ চলছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে পরিবেশপ্রেমী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘ইয়াস সকলের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তার পরেও প্রশাসন লক্ষ্মণ রেখা টানেনি। যত দিন যাবে, ততই নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হবে। উপকূল জুড়ে বেআইনি নির্মাণ থাকলে তা গুড়িয়ে যাবে।’’
যদিও এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘উপকূল এলাকায় নতুন করে কোনও নির্মাণ কাজের জন্য অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। নির্মাণ গুলোর বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’