আলোর খুঁটির নীচে পড়াশোনা করছে দুই ভাই-বোন। ছবি নেটমাধ্যম থেকে।
কথিত আছে, রাস্তার গ্যাসবাতির আলোর তলায় বসে পড়াশোনা করতেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সেই ছবিই দেখা গেল ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি থানা এলাকার বাঁশপাহাড়িতে।
বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। তাই আলো জ্বলে না। রাতে রাস্তার আলোয় সামান্যই আলোকিত হয় ঘর। কিন্তু ওই ছিঁটেফোটা আলোয় লেখাপড়া করা সম্ভব নয়। তাই বাইরে আলোর খুঁটির নীচে বসেই পড়াশোনা করছে দুই ভাই-বোন। নেটমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে সেই ছবি।
কাশমা গ্রামে ত্রিপল দিয়ে কোনও রকমে বানানো একটি বাড়িতে থাকেন এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন সহিস দম্পতি স্বপন-অঞ্জনা। ছেলে এখন বাঁকুড়ার মশানবার স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আর মেয়ে পড়ে বেলপাহাড়ির চাকাডোবার একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। স্বামী অসুস্থ। ঘরে শয্যাশায়ী। কাজ-হারা। তাই সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এখন অঞ্জনার ঘাড়েই। স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা থেকে শুরু করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া— সবই।
অঞ্জনা বলেন, ‘‘দিনমজুরের কাজ করি। হাতে যা টাকা পাই, তাতেই তো কিছুই হয় না। বিয়ের পর থেকেই আমার বাড়িতে আলো নেই। অন্ধকারেই তো থাকছি এত কাল ধরে!’’
কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই ছেলে বাড়িতে থাকছে। আর কিছু দিন পরেই স্কুলের হস্টেলে চলে যাবে। মেয়েও তাই। অঞ্জনা জানাচ্ছেন, গত প্রায় দু’বছর ধরে এই ভাবেই রাস্তার আলোর খুঁটিতে পড়াশোনা করতে হয়েছে ছেলেমেয়েদের। সেই ছবি নেটমাধ্যমে ভাইরাল হতেই বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি। বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। গ্রাম পঞ্চায়েতকেও বলেছি, তারা যাতে গোটা বিষয়টি দেখে।’’