প্রতীকী ছবি
একই অঞ্চলে তৃণমূলের দু’জন অঞ্চল সভাপতি! দু’জনেই দলীয় প্যাডে সভার ডাক দিচ্ছেন। কে আসল আর কে নকল তা নিয়েই ধন্দে রয়েছেন কর্মীরা। একটি নামজাদা তালমিছরির উদাহরণ দিয়ে কর্মীদের একাংশ বলছেন, ‘‘আসল-নকলের গেরোয় আমরা বিভ্রান্ত।’’
বিনপুর-১ ব্লকের (লালগড়) বিনপুর অঞ্চল সভাপতি পদে যদুনাথ কিস্কুকে বসানো হয় ২০১৩ সালে। কিন্তু ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে যদুনাথের লোকজন বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে দলের টিকিট পাননি। উল্টে যদুনাথের ঘনিষ্ঠরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা হেরে যান। বিনপুর পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। সেই থেকেই ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে যদুনাথের মন কষাকষির শুরু। গতবছর লোকসভা ভোটের আগে ব্লক সভাপতির দায়িত্ব পান শ্যামল মাহাতো। লোকসভা ভোটেও যদুনাথ দলের হয়ে কাজ করেননি বলে অভিযোগ। এর পরেই ব্লক সভাপতি শ্যামল বিনপুর অঞ্চলে সাতজনের একটি অ্যাডহক কমিটি গড়ে দেন। সেই কমিটির মাধ্যমে বুথ-ভিত্তিক কমিটি গড়াও হয়। কিন্তু পরে অ্যাড হক কমিটিতেও বিভাজন দেখা দেয়। যদুনাথকে কোণঠাসা করে কমিটির একাংশ শ্যামল বিশুইকে অঞ্চল সভাপতি করার জন্য ব্লক নেতৃত্বের কাছে সুপারিশ করেন। মাস তিনেক আগে যদুনাথকে সরিয়ে শ্যামল বিশুইকে অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন ব্লক নেতৃত্ব। যদিও যদুনাথের দাবি, এ ব্যাপারে ব্লক নেতৃত্বের তরফে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। তাই তিনিই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
যদুনাথ বলেন, ‘‘সংগঠনের স্বার্থে পরিবর্তন হোক। কিন্তু এটা তো পদ্ধতি নয়। জেলা নেতৃত্বের অনুমোদন ছড়াই অন্য একজন অঞ্চল সভাপতি হলেন কীভাবে?’’ বিনপুরের কুই গ্রামের দলীয় অঞ্চল কার্যালয়ে বসছেন যদুনাথ। আর বিনপুরের হাসপাতাল মোড়ে একটি দোকান লাগোয়া ঘরে দলীয় কার্যালয় খুলেছেন শ্যামল বিশুই। দু’জনেই দলের প্যাডে নিজেদের অঞ্চল সভাপতি দাবি করে শনিবার দলীয় সাংগঠনিক সভা ডেকেছিলেন। দু’জায়গায় পৃথকভাবে দলীয় বৈঠক করেন অঞ্চলের দুই নেতা। দ্বিধা বিভক্ত কর্মীদের একাংশ দু’টির কোনওটিতেই যাননি। তাঁদের প্রশ্ন, কে অঞ্চল সভাপতি সেটা আগে জেলা নেতৃত্ব ঠিক করে দিন। শ্যামল বিশুই দাবি করেছেন, ‘‘মাস তিনেক আগে আমাকে অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন ব্লক সভাপতি। সেই মতো সাংগঠনিক কাজ করছি।’’
লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল বলছেন, ‘‘গত লোকসভা ভোটে যদুনাথবাবু দলের হয়ে কাজ করেননি। উল্টে বিএসপি প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছিলেন। সেই কারণে যদুনাথবাবুকে অঞ্চল সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি একটি অ্যাড হক কমিটি গড়ে শ্যামল বিশুইকে অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ অঞ্চল-কমিটি গড়া হবে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘সদ্য জেলা সভাপতির দায়িত্বে এসেছি। আমি কাউকে অঞ্চল সভাপতি পদ থেকে বাদ দিইনি। কাউকে দায়িত্বও দিইনি। ব্লকস্তর থেকে রদবদল হয়ে থাকলে জানা নেই। খোঁজ নেব।’’ আজ সোমবার নয়া জেলা কমিটির প্রথম সভা ডেকেছেন দুলাল। ৯৮ জন সদস্যকে নিয়ে সভাটি হবে ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চল সভাঘরে। দুলালের দাবি, জেলা কমিটির সদস্য সংখ্যার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে হল ঘরে সভাটি হচ্ছে।