প্রতীকী চিত্র।
মাওবাদীদের নাম করে হুমকি দিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তোলাবাজির অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেফতার করল লালগড় থানার পুলিশ। শুক্রবার রাতে ঝাড়গ্রাম থানার কুলডিহা গ্রাম থেকে পরিমল মাহাতো নামে বছর সাতাশের ওই যুবককে ধরা হয়। পরিমলকে জেরা করে ওই রাতেই আরেক যুবককে লালগড়ের পিন্ড্রাকুলি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। বছর ছত্রিশের ওই যুবকের নাম সাধন মাহাতো।
ধৃতদের শনিবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। জামিনের আবেদন করে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী কৌশিক সিংহ দাবি করেন, পুরনো ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেই পরিমল ও সাধনকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। সরকারি আইনজীবী পবিত্র রানা বলেন, ‘‘ভয় দেখিয়ে তোলাবাজির অভিযুক্তদের তদন্তের স্বার্থে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা প্রয়োজন।’’ জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়ে পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে দুই অভিযুক্তকে চারদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালগড় থানার যশপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহিতকুমার দাস শুক্রবার লালগড় থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি জানান, গত ১১ জুলাই তাঁর মোবাইল ফোনে অচেনা এক ব্যক্তি কল করে মাওবাদী পরিচয় দিয়ে তিরিশ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ওই ফোন নম্বর থেকে আরও একাধিক বার কল এলেও ভয়ে ফোন ধরেননি তিনি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অচেনা কন্ঠের এক ব্যক্তি ডাকাডাকি করলে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে মোহিত দেখেন গামছায় মুখবাঁধা তিন যুবক দাঁড়িয়ে। মোহিতের অভিযোগ, মুখ বাঁধা ওই যুবকরা তাঁর গলা টিপে ধরে জানায় টাকা না দিলে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। মোহিতের দাবি, তিনি দুষ্কৃতীদের জানান, বাড়িতে বেশি টাকা নেই। রয়েছে হাজার পাঁচেক টাকা। সেই টাকাই দিতে বাধ্য হন মোহিত। টাকা নিয়ে দুষ্কৃতীরা ঝাড়গ্রামের দিকে চলে যায়। তবে অভিযোগপত্রে মোহিত জানান, ওই দুষ্কৃতীদের মধ্যে কুলডিহা গ্রামের পরিমল মাহাতোর কন্ঠস্বর তিনি চিনতে পারেন। পরিমল ও সাধন মোহিতের মুদি দোকানের খদ্দের।
অভিযোগপত্র পাওয়ার পরে তদন্তে নামে পুলিশ। শুক্রবার রাতে পরিমলকে পাকড়াও করে জেরা করার পরে সাধনকেও ধরা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন ও তোলাবাজির ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, পরিমল আগে চেন্নাইয়ে একটি সংস্থায় কাজ করত। লকডাউন পর্বে কাজ হারিয়ে সে বাড়ি ফিরে আসে। তারপরে ধারদেনা করে সংসার চালাতে গিয়ে সঙ্কটে পড়ে সে। মোহিতের দোকানে জিনিসপত্র কিনতে প্রায়ই যেত পরিমল। আবার সাধনও মোহিতের দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে এলাকায় বিক্রি করে সংসার চালাত। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভুয়ো মাওবাদী পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ই লক্ষ্য ছিল অভিযুক্তদের। জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘তোলাবাজির ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে জেরা করে ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত কি-না সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’