হাতি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন বেলিয়াবেড়া ব্লকের আঁধারিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
নন-ফরেস্ট এলাকায় ঢুকে যাওয়া দলছুট হাতির হামলায় মৃত্যু হল দু’জনের। সোমবার দিনভর সেই হাতিটিকে নিয়ে জেরবার হলেন ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া এলাকার বাসিন্দারা।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরবেলা আগড়বনি গ্রামে নিজের বাড়ির বাড়ির উঠোনের শৌচাগারে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়েছিলেন কল্যাণী ঘোষ (৩৬) নামে এক মহিলা। তখন আচমকা বাঁশঝাড়ের আড়াল থেকে হাতিটি বেরিয়ে এসে কল্যাণীকে শুঁড়ে জড়িয়ে ধরে। হাতির দাঁত ঢুকে গিয়ে কল্যাণীর পেট ও পিঠ এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই মহিলার। এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে হাতিটি ধান জমি মাড়িয়ে বিস্তীর্ণ খেতের ধানচাষ নষ্ট করে দেয়। ওই গ্রামেই শম্ভু পাতর নামে এক ব্যক্তির মাটির বাড়ির উঠোন ভেঙে দেয় হাতিটি। এরপর বেলিয়াবেড়া রাজবাড়ির কাছে অরবিন্দ দণ্ডপাট (৭২) নামে এক ভবঘুরে বৃদ্ধকে শুঁড়ে জড়িয়ে পুকুরের ঘাটে পাঁকের মধ্যে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে হাতিটি বেলিয়াবেড়ারই ব্যাঘ্রেশ্বরচক এলাকায় চলে যায়। সেখানে রাস্তার ধারে সাইকেল রেখে জমিতে সার দিচ্ছিলেন বিশ্বজিৎ খিলাড়ি নামে এক চাষি। হাতিটি তাঁর সাইকেল ও আঁধারিয়া গ্রামে একটি ট্যাক্টর ভেঙে দেয়। আম্বি গ্রামে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকঅ্যাপ ভ্যানকে ধাক্কা মারে সে। গাড়িটির ক্ষতি হয়। আশুই গ্রামে গৃহপালিত একটি শুয়োরকে পা দিয়ে আঘাত করলে শুয়োরটি মরে যায়। এরপরে বেলিয়াবেড়া ব্লক সদর এলাকায় ঘোরাফেরা করতে থাকে হাতিটি। খবর পেয়ে চলে আসেন বনকর্মী ও পুলিশ। তারপর হাতিটি বেলিয়াবেড়া রাজবাড়ির কাছে গিয়ে বৃদ্ধকে শুঁড়ে জড়িয়ে মারে। বিকেলে বেলিয়াবেড়া থেকে ধান জমি দিয়ে বাহারুনা এলাকায় যায় হাতিটি। মানুষের তাড়া খেয়ে হাতিটি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। সন্ধ্যায় পুলিশ ও এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে চিংড়ার জঙ্গল হয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে যায় হাতিটি।
এ দিন দুই মৃতের বাড়িতে যান বেলিয়াবেড়ার বিডিও জিশান খান ও বেলিয়াবেড়া থানার ওসি সৌরভ ঘোষ। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ এস হলেইচ্চি বলেন, ‘‘নিঃসঙ্গ হাতিটি ঝাড়খণ্ডের সীমানা পেরিয়ে এলাকায় ঢুকে পড়েছে। তাকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মৃতদের পরিবারকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’