দেহ নিয়েছে পড়শি জেলা বাঁকুড়ার সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ। —প্রতীকী চিত্র।
রোগী ‘রেফারে’র ধারা পরিচিত। মৃত্যুর পরেও দেহ ফেরাচ্ছে হাসপাতাল!
বছর পাঁচেক আগে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন ঝাড়গ্রামের এক বৃদ্ধ। কিন্তু মৃত্যুর পরে সেই অঙ্গীকার রক্ষায় দু’জায়গা থেকে ফিরতে হল। দেহ নিতে অপারগ বলে জানালেন ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজও অতিরিক্ত দেহ নিতে রাজি হল না অবশেষে মঙ্গলবার মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা পরে বছর একাশির অনুপকুমার পালের দেহ নিয়েছে পড়শি জেলা বাঁকুড়ার সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ।
মঙ্গলবার দিনভর বিস্তর হয়রানির পরে ক্ষুব্ধ ঝাড়গ্রামের এই বৃদ্ধের পরিজনরা। তাঁদের প্রশ্ন, ঝাড়গ্রাম জেলায় মেডিক্যাল কলেজ চালু হয়েছে। সেখানে অ্যানাটমি বিভাগ রয়েছে। পঠনপাঠন চলছে। অথচ মৃতদেহ নেওয়ার পরিকাঠামো নেই কেন? ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আমাদের নতুন মেডিক্যাল কলেজ। কিছু সমস্যার কারণে দেহটি নেওয়া যায়নি।’’ তবে সূত্রের খবর, দেহ সংরক্ষণের জন্য ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এখনও তৈরি হয়নি।
অনুপের বাড়ি বিনপুর থানার দহিজুড়ির চকচালতা এলাকায়। ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে গিয়ে তিনি সস্ত্রীক মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন। মঙ্গলবার সকাল পাঁচটা নাগাদ দহিজুড়ির বাড়িতেই বার্ধক্যজনিত কারণে অনুপের মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকের শংসাপত্র পাওয়ার পর ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মৃতের ছেলে রূপম পাল। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দেন, উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় মৃতদেহ নেওয়া সম্ভব নয়। এরপর রূপম যোগাযোগ করেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। সেখানকার অ্যানাটমি বিভাগ থেকে জানানো হয়, তাদের পর্যাপ্ত দেহ রয়েছে। অতিরিক্ত দেহ তাঁরা নেবেন না।
বাবার শেষ ইচ্ছা কি তাহলে পূরণ হবে না! চিন্তায় পড়ে রূপম বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করতে থাকেন। বিষয়টি জানতে পেরে রূপমের পাশে দাঁড়ান ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট ভলান্টরি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সম্পাদক চন্দন শতপথী।
চন্দন যোগাযোগ করেন মরণোত্তর দেহদান অঙ্গীকারের সংস্থা ‘গণদর্পণে’র সঙ্গে। ওই সংস্থা মারফত বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা দেহ নিতে রাজি হয়।
এরপর রূপম বাবার দেহ শববাহী গাড়িতে করে ১২০ কিমি দূরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যান। বিকেলে পৌঁছনোর পর সেখানে সঙ্গে সঙ্গে দেহ নিয়ে নেন অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান অনুপম বাস্কে।
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ অর্পণকুমার গোস্বামী বলছেন, ‘‘দেরিতে দেহটি আসায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে মেডিক্যাল পঠনপাঠনের কাজে দেহটি ব্যবহার করা হবে।’’