দফারফা: বালি-লরি চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত চিচিড়ার রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
চেক-পোস্ট ফাঁকি দিয়ে ঘুরপথে দেদার চলছে অতিরিক্ত বালি ও অন্য পণ্য বোঝাই লরি। এর ফলে, একদিকে শুল্ক আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে। অন্য দিকে, বিকল্প রাস্তা ভেঙেচুরে হচ্ছে দফারফা। গোটা ঘটনা জেনে ক্ষুব্ধ খোদ পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
ঝাড়গ্রামের ফাঁসিতলায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে মোটর ভেহিক্যালসের চেক পোস্ট ফাঁকি দিতে অতিরিক্ত বালি ও অন্য পণ্যবাহী লরিগুলি ঘুরপথে অরণ্যশহরের একলব্য সরণি দিয়ে যাতায়াত করছে বলে অভিযোগ। পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের একাংশ এই চলাচলে সহায়তা করছেন বলেই স্থানীয় মহল থেকে নালিশ গিয়েছে পরিবহণমন্ত্রীর কাছে। জানা গিয়েছে, নিজস্ব সূত্রে অভিযোগ খতিয়ে দেখে রীতিমতো অসন্তুষ্ট শুভেন্দু। তিনি এখন দলের তরফে ঝাড়গ্রামের জেলা পর্যবেক্ষক। শহরে পুরভোটও আসন্ন। ফলে, বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে। অস্বস্তিতে জেলার পুলিশ-প্রশাসনিক মহলও।
বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম একলব্যে এসেছিলেন শুভেন্দু। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের যথেষ্ট সত্যতা রয়েছে। লরি চেক পোস্ট ফাঁকি দিচ্ছে কিনা সেটা পুলিশ ট্রাফিক পুলিশকে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবহণ দফতর কী করবে!’’
লরিতে বহনক্ষমতার থেকে বেশি মালপত্র থাকলে ফাঁসিতলা চেক পোস্টে জিএসটি-সহ জরিমানা আদায় করা হয়। তা ফাঁকি দিতেই অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই লরিগুলি ঘুরপথে যাতায়াত করছে বলে অভিযোগ। গোপীবল্লভপুর, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার দিক থেকে আসা বালি ও অন্য পণ্যবাহী লরিগুলি ফোঁকোঘাট থেকে চিচিড়া হয়ে জামবনির শাবলমারার রাস্তায় ঢুকছে। তারপর জামবনি থানার পাশের রাস্তা দিয়ে দুবরাজপুর মোড় হয়ে ঝাড়গ্রাম শহরের একলব্য সরণি ধরে সারদাপীঠ মোড় হয়ে ৫ নম্বর রাজ্য সড়ক দিয়ে লোধাশুলিতে ফের জাতীয় সড়কে উঠছে। একই ভাবে লোধাশুলির দিক থেকে গোপীবল্লভপুর ও ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশাগামী লরিগুলিও রাজ্য সড়ক ধরে ঝাড়গ্রাম শহর হয়ে জামবনি থানার পাশের রাস্তা দিয়ে শাবলমারা হয়ে চিচিড়ায় ফের জাতীয় সড়কে উঠছে। অন্য কিছু রাস্তা ব্যবহার করেও ঘুরপথে লরিগুলি গন্তব্যে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই লরি যাতায়াতের ফলে গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ। ঝাড়গ্রাম শহরের একলব্য সরণিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। রাতে এই বিকল্প পথে লরি যাতায়াতের মাত্রা বাড়ে। একলব্য সরণিতেই রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত সরকারি একলব্য আদর্শ আবাসিক স্কুল। স্কুলের পাশে ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম। একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও রয়েছে একলব্য সরণির ধারেই। গত বছর জুন ও জুলাইয়ে লরির ধাক্কায় একলব্য মোড়ে স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব মূর্তিটির বেদি তিনবার ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপরও টনক নড়েনি পুলিশ-প্রশাসনের।
সূত্রের খবর, পুরো বিষয়টি জেনে শুভেন্দু এ কাজে প্রশাসনের কারা যুক্ত সেই খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। পরিবহণ দফতরের অধিকর্তাকে ফোন করে বিষয়টি দেখতেও বলেছেন শুভেন্দু। তারপরই জেলা পুলিশ ও পরিবহণ দফতর তিনটি অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই লরি আটক করে। জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, ‘‘ওভারলোড লরি জেলা পরিবহণ দফতর পুলিশের সাহায্য নিয়ে আটক করে। অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু লরি আটক করাও হয়েছে।’’ তবে তাঁর দাবি, ‘‘নজর এড়িয়ে বিকল্প পথে ওভারলোড লরি চলার অভিযোগ আমি পাইনি।’’
জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিয় কুণ্ডু জানালেন, নিয়মিত অভিযান হচ্ছে ২৭ জানুয়ারি ৭টি ও ২৮ জানুয়ারি ৬টি ‘ওভারলোড’ লরি আটক করা হয়। জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানির আশ্বাস, ‘‘শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। ওভারলোড লরির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলে। এ বার বিশেষ অভিযানও হবে।’’