ডাইন প্রথা লজ্জা, রুখে দাঁড়াল আদিবাসী তরুণ প্রজন্ম

শেষমেশ অবশ্য এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল আদিবাসী গ্রামেরই তরুণ প্রজন্ম। থানায় গিয়ে নালিশ জানানো হল। পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা সোমবার বিনপুর থানার লোয়াগাঁও গ্রামের মুদিপাড়ায় গিয়ে বোঝালেন, ডাইনি বলে কিছু নেই। পুরোটাই অন্ধবিশ্বাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিনপুর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০০:১৯
Share:

রোগের চিকিৎসা না করিয়ে ঝাঁড়ফুক করা হয়েছিল। তারপর সালিশি বসিয়ে গ্রামের ১৮ জনকে ডাইন অপবাদ দেওয়া হয়। মারধর করা হয় এক ভারসাম্যহীন মহিলাকে।

Advertisement

শেষমেশ অবশ্য এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল আদিবাসী গ্রামেরই তরুণ প্রজন্ম। থানায় গিয়ে নালিশ জানানো হল। পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা সোমবার বিনপুর থানার লোয়াগাঁও গ্রামের মুদিপাড়ায় গিয়ে বোঝালেন, ডাইনি বলে কিছু নেই। পুরোটাই অন্ধবিশ্বাস।

বিজেপি পরিচালিত বিনপুর পঞ্চায়েতের প্রধান রতন মুদির বাড়ি এই লোয়াগাঁও গ্রামেই। অভিযোগ, রবিবার রাতে গ্রামের কয়েকজন সালিশি বসিয়ে এক মহিলাকে মারধর করে গ্রামের ১০টি পরিবারের ১৮ জনকে ডাইনি ঠাওরান। কিন্তু পঞ্চায়েত প্রধান পুলিশ-প্রশাসনকে বিষয়টি জানাননি। তারপরই এ দিন গ্রামের বাসিন্দা কয়েকজন যুবক বিনপুর থানায় গিয়ে সব জানান।

Advertisement

পঞ্চায়েত প্রধান রতনের দাবি, ‘‘আমি অসুস্থ। তা-ও রাতে গোলমালের খবর পেয়ে গিয়েছিলাম। যাঁকে মারধর করা হচ্ছিল, তাঁকে উদ্ধার করে আমিই বাড়িতে পৌঁছে দিই।’’ তবে পুলিশ-প্রশাসনে না জানানোর সদুত্তর দিতে পারেননি ওই প্রধান।

স্থানীয় সূত্রে খবর, লোয়াগাঁও গ্রামের বিশ্বজিৎ মুদি আগে নেপালে গয়নার দোকানে কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে অসুস্থ হয়ে গ্রামে ফেরেন তিনি। তবে চিকিৎসকের কাছে না গিয়েছে ওঝা-গুণিনের কাছে ঝাড়ফুঁক করান বিশ্বজিৎ। ওঝার নিদানেই রবিবার রাতে গ্রামে সালিশি বসান বিশ্বজিৎ ও তাঁর দাদা রঞ্জিত। পড়শি শ্রীকান্ত মুদিও তোড়জোড়ে ছিলেন। পরে গ্রামেরই ভারসাম্যহীন মহিলা লক্ষ্মী মুদিকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তারপরই লক্ষ্মী নাকি ১৮ জন ডাইনির নাম বলে দেন। তাঁদের গ্রামছাড়া করার হুমকি দেন সালিশির উদ্যোক্তারা।

গ্রামেরই কলেজ পড়ুয়া সুজিত মুদির মা সুন্দরী ও বাবা বিষ্টুচরণকেও ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়। অভাবের তাড়নায় কলেজ ছুট সঞ্জয় মুদির মা কাজলকেও ডাইনি সাব্যস্ত করা হয়। সুজিত, সঞ্জয়ের পাশাপাশি, গ্রামের যুবক নীলরতন মুদি, মিত্তন মুদি, গ্রামের তরুণী বধূ মানসী মুদির মতো তরুণ প্রজন্মের বেশ কয়েকজন সকাল হতেই বিনপুর থানায় যান। গোচা ঘটনা জানান। সালিশির অন্যতম আয়োজক রঞ্জিত মুদিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে অভিযোগকারী সঞ্জয়, সুজিতরা জানিয়ে দেন, আইনি পদক্ষেপ নয়, তাঁরা চান প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গ্রামবাসীর মনের অন্ধকার দূর হোক। রঞ্জিতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিকেলে গ্রামে যান বিনপুর-১ ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম অফিসার শেখর গঙ্গোপাধ্যায় ও বিনপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির এডুকেশন অফিসার সুব্রত মণ্ডল। সঙ্গে ছিলেন বিনপুর থানার আইসি বিপ্লব পতি। পুলিশ-প্রশাসনের দল গ্রামে গিয়ে বোঝান ডাইনি বলে কিছুই হয় না। ভবিষ্যতে এ সব হলে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। অভিযুক্ত রঞ্জিত, বিশ্বজিৎ আমতা আমতা করে বলছেন, ‘‘কবিরাজের নিদানে খারাপ প্রভাবের কারণ খুঁজতে সালিশি ডাকা হয়েছিল। আর এ সব করব না।’’

আরা গ্রামের যে সব তরুণ-যুবারা ডাইন প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন, তাঁরা কী বলছেন?

সঞ্জয়, সুজিত, মিত্তনদের কথায়, ‘‘নেট-প্রযুক্তির যুগে আমাদেরই একাংশ এমন অন্ধবিশ্বাস আঁকড়ে রয়েছেন, এটা ভাবতে লজ্জা করছে। গ্রামের সম্মান রক্ষার্থেই থানায় গিয়ে সব জানিয়েছি।’’ তাঁদের এমন ভূমিকার প্রশংসা করে জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘তরুণ প্রজন্ম সচেতন হচ্ছেন। এটা খুবই সদর্থক দিক।’’ এলাকায় সচেতনতা প্রচারের আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক আয়েষা রানি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement