বিপজ্জনক: ঝুঁকি নিয়েই ছবি তোলা। ঘাগরায়।
শহরের বদ্ধ জীবন থেকে বনভূমির মাঝে মুক্তির স্বাদ খুঁজতে এসে পদে পদে বিপদের হাতছানি! কিন্তু কে শোনে সে কথা! পাথরে পা হড়কে জলপ্রপাতের জলে পড়ে শিশু মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা পরেও ছবিটা বদলায়নি।
শুক্রবার দুপুরে বেলপাহাড়ির ঘাগরায় গিয়ে দেখা গেল সোদপুরের রূপাঞ্জনা বাগচী, বারাসতের দিনু দত্তরা রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে এবড়ো খেবড়ো কালো প্রস্তরভূমি উজিয়ে গিয়ে বসে রয়েছেন খরস্রোতের কাছাকাছি। সেখানে বসে ছবি তুলছেন তাঁরা। আরও দুই তরুণ পর্যটক স্বল্প পরিসরের উঁচু পাথরের উপরে বসে একে অপরের ছবি ও নিজস্বী তুলছেন! পর্যটক দলের শিশুরাও পাথরের খাদের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। নজরদারির দায়িত্বে থাকা হোমগার্ড নির্মল মাহাতো, সিভিক ভলান্টিয়ার বংশীবদন সর্দারের সাবধানবাণীতে কান দিচ্ছেন না বেশির ভাগ পর্যটক। অথচ বৃহস্পতিবার দুপুরেই ঘাগরায় ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
বারুইপুরের এক দম্পতি নিজস্বী ও ছবি তোলায় মগ্ন থাকায় তাঁদের আট বছরের একমাত্র ছেলে খরস্রোতা জলপ্রবাহের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ‘‘শিশুটি একটু ঝুঁকে জলে হাত দিতেই স্রোতের টানে ভেসে যায়।’’ জলে নেমে হোমগার্ড, সিভিক ভলান্টিয়াররা আঁতিপাতি খুঁজে মিনিট দশেক পরে জলের তলায় পাথরের খাঁজে আটকে থাকা সমৃদ্ধ দাসের নিথর দেহ উদ্ধার করেন। ঘাগরায় এ ধরনের দুর্ঘটনাও আগেও ঘটেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জলপ্রপাতে স্নান করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের এক কর্মীর ডুবে মৃত্যু হয়েছিল। সারা বছরই ঘাগরায় পর্যটকেরা যান। শীতের সময়ে দেদার বনভোজনের আসরও বসে। নজরদারির দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়াররা জানালেন, করোনা আবহেও ছুটির দিন হলে কমপক্ষে পর্যটকদের ৬০-৭০টি গাড়ির ভিড় হচ্ছে।
তারাফেনি নদীর উৎসস্থল হল ঘাগরা জলপ্রপাত। বেলপাহাড়ি ব্লক সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সেখানে ঝর্নার জল আছড়ে পড়ে পাথুরে এলাকার উপর। বহু যুগ এভাবে জল প্রবাহের অভিঘাতে প্রস্তরভূমিটির মধ্যে ছোট বড় খাদ ও গহ্বর হয়ে গিয়েছে। সেই সৌন্দর্যই পর্যটকদের আকর্ষণ করে। জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে বেলপাহাড়ির নীলকর সাহেব ফেড্ররিক রাইজ ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে বেরিয়ে জঙ্গলের মাঝে ঘাগরা এলাকাটি খুঁজে পেয়েছিলেন। তারপর থেকেই ঘাগরার পরিচিতি।
শুক্রবার ঘাগরায় বেড়াতে আসা কালীঘাটের প্রবীণা রমা বসু, হাওড়ার বেলুড়ের শুভম দে বলছেন, ‘‘এখানে পর্যটকদের সতর্ক বার্তার বোর্ড দেওয়া দরকার।’’ নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সিভিক ভলান্টিয়ার জানালেন, একাংশ পর্যটক নিষেধ না শুনে ঝুঁকি নেন। আমরা বলতে গেলে উল্টে দুর্ব্যবহার করেন।’’ তবে ঘাগরায় চটজলদি উদ্ধারের আপৎকালীন ব্যবস্থাও রাখা উচিত বলে মনে করছেন পর্যটকদের একাংশ।
পর্যটন দফতর স্বীকৃত ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর কর্তা সুমিত দত্ত বলছেন, ‘‘ভরা বর্ষার ঘাগরার অপরূপের মাঝে রয়েছে ঝুঁকিও। তাই শিশু, প্রবীণ সহ সব পর্যটকদেরই অতি সাবধানে ঘাগরা পরিদর্শন করা উচিত। সেখানে অসতর্কভাবে ছবি তোলা বা জলে নামার চেষ্টা করলে প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। সর্তকতা মূলক নোটিস
বোর্ড দেওয়ার জন্য বনবিভাগকে জানানো হয়েছে।’’