মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজেশ মাহাতো-সহ কুড়মি নেতারা। রয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। ৮ অগস্ট ঝাড়গ্রাম টুরিস্ট কমপ্লেক্সে। —ফাইল চিত্র।
কুড়মি আন্দোলনের নেতা, পেশায় শিক্ষক রাজেশ মাহাতোর বদলি বাতিলের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনকে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজেশের বদলি প্রত্যাহার কিসের ইঙ্গিত? জল্পনা শুরু হয়েছে জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক বৃত্তে।
গত ২৬ মে ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের পিছনে থাকা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার অভিযোগে কুড়মি আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। তখনই রাজেশকে খড়্গপুরের বেনাপুর হাইস্কুল থেকে উত্তরবঙ্গে কোচবিহারের সিতাইয়ে একটি স্কুলে বদলির নির্দেশ জারি হয়। নতুন কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় রাজেশের বেতন বন্ধ করা হয়। তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে-পরে রাজেশ-সহ ধৃত সকলেই জামিন পান।
পঞ্চায়েত ভোটে কুড়মি সমাজের প্রার্থীরা নির্দল হিসেবে লড়ে কিছু আসনে জিতলেও বিশেষ দাগ কাটতে পারেননি। জঙ্গলমহলের ভোটে জয়জয়কার হয়েছে তৃণমূলেরই। এর পরেই অগস্টের গোড়ায় বিশ্ব আদিবাসী দিবসে ঝাড়গ্রামে এসে রাজেশ মাহাতো, শিবাজী মাহাতো, অনুপ মাহাতো-সহ কুড়মি আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন চাকরির সমস্যা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন রাজেশ। শেষমেশ বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের উপ-সচিব এক চিঠিতে রাজেশের বদলি বাতিলের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়াম্যানকে পদক্ষেপ করতে বলেছেন।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে কিন্তু সুর নরম করে রাজেশরা জানিয়েছিলেন, কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির বিষয়টি কেন্দ্রের অধীন। রাজ্যের কমেন্ট ও জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট পাওয়ার পরে কেন্দ্রকে আন্তরিক হয়ে পদক্ষেপ করতে হবে। তবে কি এই সুর বদলেরই পুরস্কার পেলেন রাজেশ? আর এতে কি লোকসভা ভোটের আগে অন্য কোনও ইঙ্গিতও আছে?
রাজেশের দাবি, বদলি বাতিলের বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই, এই সংক্রান্ত কোনও চিঠি বা ই-মেল পাননি। তিনি এখন বিভিন্ন গ্রামে সামাজিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত। তবে কুড়মিদের একাংশ বলছেন, ‘‘রাজেশ এখন জঙ্গলমহলের অন্যতম মুখ্য কুড়মি সামাজিক নেতা। ফলে, লোকসভা ভোটের আগে তাঁর কাছে নানা প্রস্তাব আসতেই পারে।’’ রাজেশ নিজেও পরোক্ষে বলছেন, ‘‘যখন কেউ প্রচারে আসে, তখন একংশ চেষ্টা করে তাকে বিচ্যুত করার। এটা অস্বীকার করার নয় যে আমি সামাজিক আন্দোলন করে একটা সমান্তরাল গ্রহণযোগ্যতার জায়গায় গিয়েছি। রাজনৈতিক দলগুলো সেই মাথাটাকে কিনতে চাইছে। কিন্তু আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ত্যাগ-তিতিক্ষা নিয়ে আন্দোলন করছি। যে কোনও মূল্যে লক্ষ্যে পৌঁছনোটাই লক্ষ্য।’’
তবে জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সহমত হয়ে রাজেশবাবুরা পথ চলার কথা হয়তো বলেছেন। সেই কারণে রাজ্য সরকারও তাঁর পেশাগত বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছেন।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কুড়মি আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের পরে হঠাৎ করে তাঁদের সুর বদল হয়েছে। বদলি প্রত্যাহার ওই বৈঠকেরই প্রতিফলন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকারের আবার মত, ‘‘রাজ্য সরকার বদলিকে ভয় দেখানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বদলি রদের পিছনে নির্দিষ্ট কোনও রফা থাকতে পারে।’’