শোকার্ত পরিজনরা। ছবি: সোহম গুহ।
প্রহরী বিহীন লেভেল ক্রসিং পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা রাজ্যে বহুবার ঘটেছে। ফের সেই একইরকম দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল খেজুরি। বৃহস্পতিবার খেজুরির ঠাকুরনগর গ্রামের এই দুর্ঘটনার বলি একই পরিবারের তিনজন। পুলিশ জানিয়েছে, গৌতম পয়ড়্যা (৩৯), তাঁর স্ত্রী মেনকাদেবী (৩৫) ও গৌতমবাবুর ভাইপোর মেয়ে বর্ষা (৬) খেজুরির জরারনগর গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি পুজোয় যোগ দিতে সাইকেল চেপে বেলেচট্টা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন গৌতমবাবু। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেনকা ও নাতনি বর্ষা। ঠাকুর নগরের কাছে দিঘা-হাওড়া রেলপথে গেট ও প্রহরীহীন একটি লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় দিঘাগামী দুরন্ত এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগেও এই ক্রসিংয়ে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েও কোনও সাড়া মেলেনি।
এ দিন দুর্ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রত্যক্ষদর্শী মলয় পয়ড়্যার কথায়, ‘‘আশেপাশে প্রচুর গাছপালা থাকায় ট্রেন আসছে বলে ওরা বুঝতে পারেনি বোধহয়। সাইকেলের পেছনে বসা মহিলার চটি রেলের পাতে আটকে যাওয়ার তাঁরা তাড়াতাড়ি লাইন পার হতে পারেননি। সেই সময় ট্রেনের ধাক্কায় তাঁরা ছিটকে দূরে পড়ে যান।’’ দুর্ঘটনার পরই অবশ্য দুরন্ত এক্সপ্রেস কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়ে। ফের ট্রেন দিঘার পথে রওনা দেয়। কয়েকবছর আগে হাওড়া- দিঘা রেলপথে রামনগর স্টেশনের আগে নরন্ডিয়াতে এমনই গেট ও প্রহরীহীন লেভেল ক্রসিং একটি যাত্রীবোঝাই ভ্যান রিকশা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। প্রাণ গিয়েছিল ভ্যানের নয় আরোহীরই। এই ঘটনার পর যাত্রী সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু ক্রসিংয়ে গেট বা প্রহরী কোনওটারই ব্যবস্থা করা যায়নি।
এ দিন দুর্ঘটনার খবর গ্রামে পৌঁছাতেই শোকের ছায়া নেমে আসে গৌতমবাবুর পরিবারে। বর্ষার বাবা বিপ্লব নিজের মেয়ে আর কাকা-কাকিমার মৃত্যুতে শোকে কোনও কথা বলতেই পারছেন না। পুলিশ জানিয়েছে, দেহ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এমন দুর্ঘটনার পর কি টনক নড়বে রেল কর্তৃপক্ষের? দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়গপুর ডিভিশনের সিনিয়ার সেফটি অফিসার সুখদেব মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও কথা বলতে চাননি।