এই সৈকতেই ঘটে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র
ভাটার সময় সমুদ্রের জল প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সরে যায়। সমুদ্রের কাছে পৌঁছতে হলে ওই দূরত্ব পেরোতে হয়। সেই দূরত্ব পেরিয়েই সমুদ্রে কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিন পর্যটক। আনন্দে মেতে উঠতে গিয়ে খেয়াল করেননি যে জোয়ার আসছে। বোঝার পর দ্রুত পাড়ে ফিরতে চেষ্টা করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত দু’জনকে কোনওরকমে উদ্ধার করা গেলেও তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয় এক জনের।
শনিবার কাঁথি -১ ব্লকের বগুড়ান জলপাইতে দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অভিষেক মজুমদার (৩৭)। তিনি হুগলির চুঁচুড়া থানা এলাকার বাসিন্দা। ওই দিন বিকেলেই কাঁথির একটি লজ থেকে তিন বন্ধু মিলে বগুড়ান জলপাই বেড়াতে গিয়েছিলেন।
দিঘা কিংবা মন্দারমণির তুলনায় কাঁথি-১ ব্লকের বগুড়ান জলপাই একেবারেই নির্জন সৈকত। বিস্তীর্ণ সৈকত এবং লাল কাঁকড়ার আকর্ষণে অনেক অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটক এখানে এলেও পর্যটন মানচিত্র এখনও ঠাঁই পায়নি ওই জায়গা। ফলে কোনও পরিকাঠামো তো দূরের কথা আশপাশে লোকালয়ও তেমন নেই।
এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ভুঁইয়া বলেন, ‘‘বিকেল তিনটে নাগাদ তিনজন কম বয়সী ছেলেকে সি বিচ ধরে হাঁটতে দেখি। সে সময় প্রায় দু’কিলোমিটার দূরত্বে সমুদ্র ছিল। খানিকটা শুকনো আর খানিকটা কাদা পথ মাড়িয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। তবে দেখে মনে হয়েছে কেউই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল না।’’ পরে একজন মহিলা সহ আরও চারজন একই ভাবে সমুদ্র দেখতে যান। শনিবার ছিল অমাবস্যার কোটাল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ শুরু হয় জোয়ার। সে সময় ওই পর্যটকেরা সি বিচে ধারে ফিরতে শুরু করেন। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দাবি, ‘‘বগুড়ান জলপাইতে জোয়ারের সময় ডান দিকে শৌলা খাল হু হু করে জোয়ারের সময় জল ঢোকে। তা সাধারণ পর্যটকদের একেবারেই অজানা।’’ ফলে জোয়ারের জল বাড়তে শুরু করায় সাতজন পর্যটকই একটি চড়ায় আটকে পড়েন। ইতিমধ্যে সন্ধ্যে নেমে যায়। এক পর্যটকের দাবি, এলাকারই একজন নিজেকে মাঝি পরিচয় দিয়ে সকলকে চড়া থেকে নৌকায় উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার জন্য মাথাপিছু এক হাজার টাকা করে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নৌকা নিয়ে আসতে অনেকটা দেরি করে ফেলেন। ততক্ষণে চড়া প্রায় গলা সমান জলে ডুবে যায়। আমরা বাঁচার জন্য তারস্বরে চিৎকার করছিলাম। একটু দূরে একটি মৎস্যখটিতে পুজো হচ্ছিল। আমাদের চিৎকার শোনেন মৎস্যজীবীরা।’’ তিনি জানান, মৎস্যজীবীদের কয়েক জন সাঁতরে এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। কিন্তু তার আগেই অভিষেক সমুদ্রে তলিয়ে যান।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় জুনপুট উপকূল থানার পুলিশ। তারা স্থানীয় মৎস্যজীবীদের নৌকা নিয়ে কল্লাশি চালালেও খোঁজ মেলেনি অভিষেকের। পরে রবিবার দুপুরে অভিষেকের মৃতদেহ সমুদ্রের পাড়ে পড়ে থাকতে দেখেন মৎস্যজীবীরা। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
পর্যটকদের যাঁরা উদ্ধার করেন তাঁদেরই একজন স্থানীয় মৎস্যখটির সভাপতি দেবব্রত খুটিয়া বলেন, ‘‘যেখানে পর্যটকদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে সেখানে দরদাম করা হচ্ছে। এ ধরনের অমানবিক ঘটনা বগুড়ান জলপাইতে দিনের পর দিন ঘটছে। শেষ পর্যন্ত একজন পর্যটককে জীবন দিয়ে তার মূল্য চোকাতে হল।’’
এবিষয়ে ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ (ড্রাগ অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল) রথীন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘আচমকা জোয়ার চলে আসায় কয়েক জন পর্যটক সি বিচে ফিরতে পারছিলেন না। পরে স্থানীয় কয়েক জন তাঁদের উদ্ধার করেন। তবে একজন পর্যটক ডুবে যান। পরে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে।’’