এমনই হাল দেশের প্রথম ডাকঘর ও টেলিগ্রাফ কেন্দ্রের। খেজুরিতে ছবিটি তুলেছেন সোহম গুহ।
পর্যটন মানচিত্রে ‘দুয়োরানি’ খেজুরি।
প্রাচীন খেজুরি বন্দর, ডাকঘর, ইউরোপীয় সাহেবদের গোরস্থানের ধ্বংসাবশেষ— খেজুরির প্রতি পদে ইতিহাসের হাতছানি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের ‘কেডগিরি’ পোস্টঅফিসটিকে দেশের প্রথম ডাকঘর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যদিও আজও সংরক্ষণের ছোঁয়ামাত্র লাগেনি এই ডাকঘরে।
কৃষি নির্ভর খেজুরিতে সে ভাবে শিল্পের বিকাশ হয়নি। বেশিরভাগ জমিই একফসলী হওয়ায় চাষের লাভের হার কম। স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, খেজুরির অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও পর্যটন বিকাশে সে ভাবে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। পর্যটনের বিকাশ হলে খেজুরির ছবি আজ অন্যরকম হতে পারত।
পরিকল্পনামাফিক এগোলে খেজুরিকে রাজ্যের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব বলে মানছেন খেজুরি ইতিহাস সংরক্ষণ সমিতির সম্পাদক পার্থসারথি দাস। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা শুনে কিছু পর্যটক খেজুরিতে বেড়াতে আসেন। যদিও রাতে থাকার জায়গা না মেলায় সবকিছু না দেখেই পর্যটকদের ফিরে যেতে হয়।’’
কলকাতা থেকে খেজুরির যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের থেকে উন্নত হয়েছে। এখন ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই কলকাতা থেকে খেজুরিতে পৌঁছনো যায়। পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘খেজুরিতে পর্যটকদের থাকার মতো কোনও অতিথিশালা বা হোটেল নেই। নেই কোনও সরকারি ডাকবাংলোও। রাতে থাকার ব্যবস্থা করা গেলে খেজুরিতে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়বে।”
পর্যটনের বিকাশ হলে খেজুরির পরিকাঠামোরও উন্নতি হবে। আয়ের মুখ দেখবেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। খেজুরির জনকার ব্যবসায়ী শ্যামল দত্ত, স্কুল শিক্ষক সুমন বাকরাদের কথায়, ‘‘খেজুরির মনোরম পরিবেশে সেচ ও বন দফতরের অনেক জমি পড়ে রয়েছে। ওই সব জমি থেকে রাজ্য সরকারের কোনও রকম আয়ও হয় না। পর্যটন দফতর উদ্যোগী হয়ে অব্যবহৃত জমিতে পর্যটক আবাস, ‘রিসর্ট’ গড়ে তুললে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। হাল বদলে যাবে এলাকার,” খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম মণ্ডল বলেন, “খেজুরিতে প্রাচীন ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন রয়েছে। খেজুরি বন্দর, ডাকঘর, ইউরোপীয় সাহেবদের গোরস্থানের ধ্বংসাবশেষের ঐতিহ্য অতুলনীয়। খেজুরিকে পর্যটন শিল্পের মানচিত্রে তুলে আনার জন্য নানা রকম পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে।”
অসীমবাবু জানান, ভগ্নস্তূপে পরিণত হওয়া সেচ দফতরের প্রাচীন বাংলোটির সংস্কার করে অতিথিশালা তৈরি করা হবে। পর্যটন বিকাশের জন্য প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়েছে। খেজুরির পর্যটন ব্যবস্থার বিকাশে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডলও।
বাস্তবে খেজুরির হাল কবে ফেরে, তা অবশ্য সময়ই বলবে।