বাঁদরভুলায় প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
ঝাড়গ্রামের পর্যটনের পালে হাওয়া লেগেছে। বছরভর পর্যটকরা আসছেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালির নাগালের মধ্যে থাকার উপযুক্ত হোটেল এখনও হাতে গোনা। ফলে, অনেক সময়ই ঝাড়গ্রাম বেড়াতে এসে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় পর্যটকদের। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা এবং পর্যটকদের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। সমস্যার বিষয়টি অনুধাবন করে অবশেষে পদক্ষেপ করতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার ঝাড়গ্রামে সুলভ মূল্যে পর্যটকদের জন্য অতিথিশালা গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করবে জেলা পরিষদ। সম্প্রতি জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যাম পাত্র কলকাতায় গিয়ে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। পর্যটনমন্ত্রীকে জেলায় আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উদ্যোগে জঙ্গলমহলের পর্যটন-পরিকাঠামো উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে বাঁদরভুলায় জঙ্গলের মাঝে তৈরি হয়েছে বন উন্নয়ন নিগম পরিচালিত ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে ৬টি ঘরে ১২ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কর সমেত এক একটি ঘরের দৈনিক ভাড়া ১,৭১০ টাকা। ঐতিহ্যবাহী ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির সামনে হয়েছে পর্যটন দফতরের রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। এখানে ১১ টি কটেজে ৪৪ জন থাকতে পারেন। জুন পর্যন্ত ঘর ভাড়ায় ৩০ শতাংশ ছাড়। জুলাই থেকে কর সমেত ঘরভাড়া ১,৯০৭ টাকা।
এ ছাড়া রাজবাড়ির নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী বেসরকারি অতিথিশালা রয়েছে। সেখানে ঘর ভাড়া আরও বেশি। রাজবাড়ির ডিল্যাক্স ঘরের দৈনিক ভাড়া ২,৫০০ টাকা। এ ছাড়া অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ কর। সাধারণ ঘর ভাড়া গড়ে দু’হাজার টাকা। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ কর। রাজবাড়ির সিঙ্গল বেড নন-এসি ঘরের দৈনিক ভাড়া সাড়ে আটশো টাকা। মূলত, উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পর্যটকরাই এগুলিতে থাকেন। এই সব সরকারি ও বেসরকারি অতিথিশালাগুলির খাবার-দাবারের দামও বেশ চড়া। গড়পড়তা পর্যটকদের জন্য ঝাড়গ্রামে সুলভ দরে থাকার জায়গার অভাব। অরণ্যসুন্দরী’, ‘ডুলুং’, ‘ঈশানী’, ‘যশোদা ভবন’-এর মতো হাতে গোনা কয়েকটি সুলভ বেসরকারি গেস্ট হাউস রয়েছে। মরসুমে সেগুলি পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। অথচ এই ঝাড়গ্রামেই এক সময় পর্যটকের থাকার জন্য ‘বনানী অতিথি নিবাস’ নামে ১৬ হাজার বর্গফুটের একটি সরকারি অতিথিশালা ছিল। সেখানে যেমন বাতানুকুল ঘর পাওয়া যেত। তেমনই সুলভ দামে সাধারণ ঘরও মিলত। পাওয়া যেত সস্তার ডর্মেটরি। একসঙ্গে শ’খানেক পর্যটক থাকার পরিকাঠামো ছিল সেখানে। সুলভ দামে খাবার দাবারের মানও বেশ ভাল ছিল। কিন্তু জঙ্গলমহলের মাওবাদী অশান্তি পর্বে ২০১০ সালের গোড়ায় বনানীতে সিআরপি-র শিবির হয়ে যায়। এখন ওই অতিথিশালার ভবনে সিআরপি-র ১৮৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার।
ঝাড়গ্রাম বেড়াতে আসা মনোময় হালদার, তাপ্তী বর্মন, মল্লিকা মণ্ডলদের কথায়, “ঝাড়গ্রামের অতিথিশালায় ঘর ভাড়া বড্ড বেশি। সাধারণ পর্যটকদের জন্য সুলভ দরের অতিথিশালার ব্যবস্থা হলে ভাল হতো। এসব এলাকায় হোম স্টে-র ব্যবস্থা চালু হলে পর্যটকদের বেশি সুবিধা হবে।” ঝাড়গ্রামের এক বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “ঝাড়গ্রামে এখন প্রচুর পর্যটক আসছেন। কিন্তু সাধারণ পর্যটকদের জন্য সুলভ মূল্যে থাকার জায়গাটা বড়ই সীমিত।” সমস্যার কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যাম পাত্র। তিনি বলেন, “পর্যটনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছি। জেল পরিষদের তরফে এ ব্যাপারে রাজ্যে আবেদন করা হবে।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “পর্যটকদের অনুরোধ ও প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব।”