বাম-ছায়া কাটাতে ভরসা দিদিই

প্রার্থী রয়েছেন তিনিই। তবে বদলে গিয়েছে শুধু জার্সিটা। আর সেটাই বিড়ম্বনায় ফেলেছে তৃণমূলকে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে পরিবতর্নের ঝড়েও ব্যতিক্রম ছিল চন্দ্রকোনা।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০০
Share:

প্রার্থী রয়েছেন তিনিই। তবে বদলে গিয়েছে শুধু জার্সিটা। আর সেটাই বিড়ম্বনায় ফেলেছে তৃণমূলকে।

Advertisement

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে পরিবতর্নের ঝড়েও ব্যতিক্রম ছিল চন্দ্রকোনা। কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটের প্রার্থী শিবরাম দাসকে এক হাজারের একটু বেশি ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী ছায়া দোলই। সিপিএমের গড় বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল সিপিএম। কিন্তু বছর দু’য়েক যেতে না যেতেই ছায়া দোলই সিপিএম ছেড়ে যোগ দিলেন শাসক দলে। আর এতেই ক্ষুব্ধ চন্দ্রকোনা বিধানসভার ভোটাররা।

কিন্তু ছায়াদেবীর দল বদলে স্থানীয়দের ক্ষোভ কেন? উত্তরটা মিলল স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেই।

Advertisement

চন্দ্রকোনা ঐতিহাসিক শহর। গোটা শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু প্রাচীন মন্দির। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি ছিল, চন্দ্রকোনা যেন পযর্টন মানচিত্রে স্থান পায়। গতবার সিপিএম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে অন্তত বিধায়ক তহবিলের টাকায় একাধিক মন্দিরের সংস্কার করা হবে। সঙ্গে স্বাস্থ্য, রাস্তা-ঘাট, প্রত্যন্ত গঞ্জে পানীয় জলের ব্যবস্থার উন্নতি করা হবে। সঙ্গে চাষের জন্য বিভিন্ন এলাকায় অগভীর নলকূপ তৈরি, মনসাতলা চাতালে উড়ালপুল, শিলাবতী নদীর উপর সেতু সহ হাজারো উন্নয়ন। কিন্তু এগুলির একটাও হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা যে আশ্বাস দিয়েছিল তার ভিত্তিতেই ভোট দেওয়া হয়েছিল ছায়াদেবী। কিন্তু বছর গড়াতেই আরও উন্নয়নের জিগির তুলে দল বদল করলেন তিনি। কিন্তু তারপর তিন বছরেও কোনও কাজ হয়নি।

স্বাভাবিক ভাবেই ভোটারদের কাছে ফের ভোট চাইতে গিয়ে কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তৃণমূলকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘উন্নয়ন বাদ থাক, এলাকাটা ঘুরে দেখেছেন ছায়াদেবী কখনও? বিধায়ক শাসক দলে যোগ দেওয়ার পরেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। ফলে ভোট দিয়ে কী লাভ বলুন তো?’’ এমনকী এলাকার গোষ্ঠী কোন্দলে রাশ টানতে একেবারেই পারেননি ছায়া দোলই।

আবার অন্য সমস্যায় পড়েছে বামেরাও। এ বার সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন শান্তিনাথ বধূক। সিপিএমের এক জেলা কমিটির সদস্যের কথায়, “শাসক দলের কোন্দলকে হাতিয়ার করে ভোটে নেমেছি। আর যে উন্নয়নের জিগির তুলে দল ছেড়েছিলেন ছায়াদেবী, তার যে কিছুই হয়নি, সেটাও বোঝাচ্ছি মানুযকে।’’ তবে কাঁটা সেই দল বদলই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাম নেতার কথায়, ‘‘বিধায়ক ছাড়ার অপবাদ শুনেই কাজ করতে হচ্ছে।’’

ভোটারদের কাছে গিয়ে নানা ঝাঁঝালো প্রশ্নের মুখেও পড়তে হচ্ছে তৃণমূলের নেতাদের। দলের এক জেলা কমিটির সদস্যের কথায়, “পরিস্থিতি মোটেই ভাল নয়। প্রার্থী জিতলে দলের হাওয়া সঙ্গে দিদির জন্যই জিতবেন!” পরিস্থিতি আঁচ পেয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীও চন্দ্রকোনায় সভা করে গিয়েছেন। একাধিক বার মুকুল রায় থেকে তারকা সাংসদ দেব, সুব্রত বক্সী-সহ অন্যান্য রাজ্য নেতারাও ঘুরে গিয়েছেন। সভায় এসে মমতা নিজেও বলেছেন, ‘‘ছায়া কে নয়, ভোটটা আমাকে দিন।’’এত কিছু দেখেশুনে রাজনীতিতে আনকোরা শাসক দলের প্রার্থী ‘চুপচাপ’
হয়ে গিয়েছেন।

ভোট সমীকরণে কী বলছে? ২০১১ সালের ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী শিবরাম দাস হেরেছিলেন এ বারের দলের প্রার্থী ছায়া দোলইয়ের কাছে। ব্যবধান ছিল ১২৯৬। শতাংশের হিসাবে সিপিএম পেয়েছিল ৪৮.৩৯শতাংশ। তৃণমূলের ছিল ৪৭.৭৫ শতাংশ। বিজেপির দখলে ছিল ৩.৮৬ শতাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে আরামবাগ লোকসভার অধীন চন্দ্রকোনা বিধানসভায় তৃণমূল অনেকটাই এগিয়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার পেয়েছিলেন ১লক্ষ ৯হাজার ৯৪৯টি ভোট। শতাংশের নিরিখে তৃণমূল পেয়েছিল ৫২.৩৫ শতাংশ। শতাংশের হিসাবে কংগ্রেসের ছিল ২.১০ শতাংশ এবং বিজেপির ৯.০৮শতাংশ। অনান্যদের দখলে ছিল ০.৪৯ শতাংশ।

তবে চন্দ্রকোনা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির সংগঠন একেবারেই নড়বড়ে। ফলে লড়াইটা ছায়া দোলইয়ের সঙ্গে শান্তি বধূকের। এতকিছু সমস্যার মধ্যেও কী সম্ভব হবে আসনটি নিজেদের দখলে রাখা? মুচকি হেসে ছায়া দোলইয়ের উত্তর, ‘‘মাথার উপর দিদি রয়েছেন। আমি জিতবই।’’ শুনে সিপিএম জোট প্রার্থীর কটাক্ষ, “ দলের নেত্রীর উপর ভর করে যিনি জেতার আশা করেন-তিনি আবার উন্নয়ন কী করবেন? আমাকেই এবার এখানকার মানুষ সমর্থন করবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement