ফাইল চিত্র।
নারদ-মামলায় তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে পথে নেমে বিক্ষোভ হচ্ছে রাজ্যজুড়ে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে সিবিআইয়ের মুন্ডপাত করে পোস্টারে ছয়লাপ ঝাড়গ্রামেও বিভিন্ন এলাকাও। অথচ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতোকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ গ্রেফতার করে জেলবন্দি করে রাখলেও নিশ্চুপ জেলা তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ ঘনিয়েছে ছত্রধরের পরিবার ও ঘনিষ্ঠ মহলে।
ঝাড়গ্রাম জেলায় ভোট ছিল ২৭ মার্চ। সেই রাতেই লালগড়ের আমলিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে ছত্রধরকে গ্রেফতার করে এনআইএ। ওঠে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ। ২০০৯ সালের অক্টোবরে বাঁশতলা স্টেশনে ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস আটকের মামলায় ছত্রধরকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ ওই ঘটনার সময় ছত্রধর জেলবন্দি ছিলেন। এনআইএ-র দাবি, জেল থেকেই ষড়যন্ত্র করেছিলেন তিনি। এআইএ-র আবেদনের প্রেক্ষিতে এই মামলায় ইউএপিএ ধারাও যুক্ত হয়েছে। ছত্রধর এখন প্রেসিডেন্সি জেলে বিচারাধীন বন্দি। করোনা আবহে ভার্চুয়াল শুনানিতে ১৪ দিন অন্তর হাজিরা দিচ্ছেন বিশেষ আদালতে।
ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রাম জেলার চার বিধানসভাতেই বড় জয় পেয়েছে তৃণমূল। ছত্রধরকেই জঙ্গলমহলে দলের মুখ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই নেতার মুক্তির দাবিতে দলের কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ছত্রধরের পুরনো সঙ্গী তথা লালগড় ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি রাজু হাঁসদা মানছেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা অভিযোগে ছত্রধরকে গ্রেফতার করে জেলবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁর ক্ষেত্রেও আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। তবে সমাজমাধ্যমে ছত্রধরের মুক্তির দাবি জানিয়ে চলেছি।’’ ছত্রধরের ঘনিষ্ঠ আর এক তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ছত্রধরকে জঙ্গলমহলে দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরলেও তাঁর অতীত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন জেলা নেতৃত্ব। ভোটের ফলে প্রমাণ হয়েছে সেটা ছিল অমূলক সন্দেহ। ছত্রধরের মুক্তির দাবিতেও আন্দোলন হওয়া উচিত।’’
জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ওই সময়ে নির্বাচনী বিধি জারি ছিল। দলের তরফে কোনও নির্দেশ না থাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়নি।’’ আর ছত্রধরের স্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ নারী ও শিশু সুরক্ষা আয়োগের সদস্য নিয়তি মাহাতো বলছেন, ‘‘উনি গ্রেফতার হওয়ায় কেন কেউ প্রতিবাদ করেননি সেটা জানি না। হয়তো নির্বাচনী বিধির কারণে সমস্যা ছিল।’’
গত বছর ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে এক দলীয় সভায় ছত্রধরই যে জঙ্গলমহলে দলের মুখ সেই বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছত্রধরকে ঝাড়গ্রাম ছাড়াও জঙ্গলমহলের অন্যান্য জেলার প্রচারেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ছত্রধরের অতীত নিয়ে তাঁকে গোড়া থেকেই এড়িয়ে যাচ্ছিলেন জেলা তৃণমূলের একাংশ। এই নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়ে ভোটের আগে বাড়িতে বসে গিয়েছিলেন ছত্রধর। তাঁকে সস্ত্রীক কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে পাঞ্জাবি ও শাড়ি উপহার দিয়ে মান ভাঙিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের প্রচারের কাজ শুরু করেন ছত্রধর। লালগড়ে নির্বাচনী জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুইল চেয়ারের পাশে সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল ছত্রধরকে। তিনি সভায় বক্তৃতাও করেন।
তবে ছত্রধরের ঘনিষ্ঠজনেরা জানাচ্ছেন, ছত্রধর ভোটের আগে জঙ্গলমহলের জেলাগুলি চষে বেড়িয়েছেন। দলের একাংশ ছত্রধরকে এড়িয়ে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করে গেলেও তিনি প্রার্থীদের প্রচারে ও দলের নির্বাচনী কর্মসূচিতে সাধ্যমতো থেকেছেন। জেলার চারটি বিধানসভায় বিপুল এই জয়ের অন্যতম অংশীদার তো ছত্রধরও। নিয়তিও বলছেন, ‘‘তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে আমার স্বামীর সভা-মিছিলে বড় জমায়েতই প্রমাণ করেছিল তাঁর সঙ্গে জঙ্গলমহলের জনতা রয়েছে। তাই তো রাজনৈতিক কারণে তাঁকে ফের ইউএপিএ ধারায় গ্রেফতার করে জেলবন্দি করে রাখা হয়েছে।’’