সরকারী কর্মীদের কড়া বার্তা মমতার। — ফাইল চিত্র।
সরকারি কাজে গড়িমসি হলে তিনি যে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হন না, বারবার তা বুঝিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরেরই এক প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘পার্টির লোকেরা ভুল করলে আমি অ্যাকশন নিই। যাঁরা সরকারি দায়িত্বে আছেন, তাঁরাও কিন্তু তাঁদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না।’’
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও প্রচুর অভিযোগ যায় মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্রিভান্স সেলে’। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘একটা জেলা থেকেই যদি এতগুলি অভিযোগ আসে, তাহলে নিশ্চয়ই ধরে নিতে হবে কেউ কেউ কাজ করছেন না।’’ ‘‘কেন কাজগুলি না- করে ফেলে রাখা হবে?’’— প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্রিভান্স সেলে’ জমা পড়া অভিযোগগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায় রাজ্য। জেলাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘গ্রিভান্স সেল’, এক অর্থে এটি ‘ই- সমাধান’। সাধারণ মানুষের নানা অভিযোগের সুষ্ঠু সুরাহার লক্ষ্যে সেলটি চালু হয়েছে। সেলটি চালুর পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘সাধারণ মানুষ তাঁদের যে কোনও সমস্যার কথা যাতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছে দিতে পারেন এবং সমস্যার গুরুত্ব বুঝে যাতে অবিলম্বে তার সমাধান হয়, সেই লক্ষ্যেই গ্রিভান্স সেল চালু করা হয়েছে।’’ প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্রিভান্স সেল’-কে আরও ‘শক্তিশালী’ করতে সম্প্রতি অতিরিক্ত সাতজন আধিকারিককে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সাতজন ডব্লিউবিসিএস অফিসারকে ওই সেলের ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’র (ওএসডি) দায়িত্বে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একাধিক মহলের মতে, সেলে পৌঁছনো অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তিতেই নবান্নের এই পদক্ষেপ।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্রিভান্স সেলে’ বমিলিয়ে অভিযোগ গিয়েছে ৪৩,৬১৩টি। এর মধ্যে ১৫,৩৫৭টি অভিযোগ ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল— এই সময়ের মধ্যে গিয়েছে। নিয়মানুযায়ী, অভিযোগপিছু সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ (এটিআর) তলব করা হয়। জেলা হয়ে ওই রিপোর্ট নবান্নে পৌঁছয়। এখনও পর্যন্ত ৩৯,৫৩৪টি অভিযোগের ক্ষেত্রে এটিআর জেলায় জমা পড়েছে। তা রাজ্যে পাঠানোও হয়েছে। এর মধ্যে ১১,২৭৮টি এটিআর জমা পড়েছে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল- এই সময়ের মধ্যে। ৪,০৭৯টি অভিযোগের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এ ক্ষেত্রে এটিআর জমা পড়েনি।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গিয়েছে জেলা পরিষদের বিভিন্ন কাজ নিয়ে, ২,৪২৩টি। প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত অভিযোগ গিয়েছে ৭০টি, মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত অভিযোগ গিয়েছে ৮৯টি, সমাজকল্যাণ সংক্রান্ত ৪৮০টি, ভূমি সংক্রান্ত ২৪৮টি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ৭৪টি, খাদ্য সংক্রান্ত ২০টি। জেলা পরিষদের কাজের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্রিভান্স সেলে’ সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছিল আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে। জেলা পরিষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সব ক্ষেত্রেই এটিআর পাঠানো হয়েছে। কোনও অভিযোগ পড়ে নেই।’’
বছর চারেক আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নবান্নে ‘গ্রিভান্স সেল’ খোলা হয়েছিল। ই-মেল, টোল ফ্রি নম্বর থেকে হোয়াটস্অ্যাপ- একাধিক মাধ্যমে অভিযোগ জানানো যায় এই সেলে। অভিযোগ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেই পৌঁছয়। পরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে অভিযোগগুলির কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। জেলা প্রশাসনের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘যতগুলি অভিযোগ জমা পড়েছিল, তার বেশিরভাগই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটিআর নবান্নে পাঠানোও হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘জেলায় এই সেলের মাধ্যমে ৯১ শতাংশ নাগরিক- অভিযোগের সুরাহা করা হয়েছে।’’