মেদিনীপুর শহরে টিএমসিপির দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র।
আর জি করের চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। প্রতিদিনই মিছিল হচ্ছে নানা প্রান্তে। বিভিন্ন মিছিলে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে পড়ুয়াদের। এই আবহে কাল, বুধবার, ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবস। প্রতিবারের মতো এবারও ওই দিনে কলকাতার সমাবেশ করবে তারা। সেখানে থাকার কথা তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
রাজ্যে পরিবর্তনের পরে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস উৎসবের মেজাজেই পালন করে এসেছেন টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। তবে এবার যে পরিস্থিতি একটু হলেও আলাদা— তা মানছেন তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের অনেকেই। এর মধ্যেই আজ, ২৭ অগস্ট ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজে’র ডাকে হবে নবান্ন অভিযান। সব দেখে তৃণমূলের কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্র নেতা বলছেন, নানান কারণে এ বারের ২৮ অগস্টের সমাবেশ রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সেখানে ভাল জমায়েত করতে পারলে দল অনেকটাই চাঙ্গা হবে।
মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা টিএমসিপি সূত্রের দাবি, ২৮ অগস্টের সভায় তাদের দিক থেকে ৪ হাজার কর্মী, সমর্থক যাবেন। সংগঠনের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘সভার সমর্থনে প্রচার চলেছে। আমাদের জেলা থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী যাবেন।’’ অনেকে বাসে করে যাবেন। আবার অনেকে ট্রেনে করে যাবেন বলেও দাবি। সংগঠন সূত্রের দাবি, সভার সমর্থনে কলেজে কলেজে প্রস্তুতি সভা, ব্যানার বাঁধা হয়েছে। কয়েকদিন আগে মেদিনীপুরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রশিক্ষণ শিবির এবং কর্মশালাও হয়েছে। আশেপাশের সাতটি সাংগঠনিক জেলাকে নিয়ে ওই কর্মসূচি হয়। নবান্ন অভিযানের প্রভাব সভায় পড়বে না তো? টিএমসিপির জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথের দাবি, ‘‘নবান্ন অভিযানের পিছনে রয়েছে বিজেপি, এবিভিপি, আরএসএসের কিছু লোক। ওরাই গোলমালের চেষ্টা করছে।’’
সমাবেশ নিয়ে একাধিক প্রস্তুতি বৈঠক, মিছিল করেছে টিএমসিপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা। ওই জেলার ১০টি ব্লক এবং পাঁচটি পুর শহর থেকে কয়েক হাজার টিএমসিপি-কর্মী সমর্থক সমাবেশে যাবেন বলে খবর। ছাড়া হবে প্রায় ৩০টি বাস। ছোট গাড়িও হয়েছে। অনেকে ট্রেনে যাবেন। ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা টিএমসিপি সভাপতি সৈয়দ মাহফিজুর রহমান বলেন, “ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা থেকে পাঁচ হাজারের বেশি টিএমসিপি সমর্থক সমাবেশে যাবেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আর জি করের ঘটনার সঠিক বিচার চাই। তবে বিজেপি এবং সিপিএম যেভাবে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে, আমরা তার বিরোধী।”
টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসে ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে ১১টি বাস ও বেশ কয়েকটি ছোট গাড়ি যাওয়ার কথা। সব মিলিয়ে দু’হাজার ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা টিএমসিপি নেতৃত্ব। জেলা টিএমসিপির এক নেতা বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এবারের সমাবেশে ছাত্রীদের সংখ্যা অনেকটা কমতে পারে। বেশি করে ছাত্রদের নিয়ে যাওয়া হবে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা টিএমসিপির সভাপতি বিশ্বনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘আর জি করের ঘটনা কোনও প্রভাব আমাদের সমাবেশে পড়বে না। রাজ্যবাসী দেখতে পারছেন সিবিআই এতদিনে কিছুই করতে পারেনি।’’ তবে কঠিন সময়েও গোষ্ঠী কোন্দলে বিরাম নেই এই জেলায়। জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে টিএমসিপির দুই গোষ্ঠী আলাদা করে সমাবেশে যাবে।
কয়েক বছর হল রাজ্যে ছাত্র ভোট বন্ধ রয়েছে। টিএমসিপির একাংশ নেতৃত্ব আড়ালে মানছেন, ছাত্র ভোট না হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে সংগঠন দুর্বল হয়েছে। বুধবারের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রভোট নিয়ে কোনও ইঙ্গিত দেন কি না, সে দিকে নজর রয়েছে একাধিক মহলের। ‘নীরবতা’ ভেঙে আর জি কর নিয়ে তিনি কিছু বলেন কি না, কৌতূহল সেই নিয়েও।