বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরে ‘পছন্দ মাফিক মিশ্র পাঠ্যক্রম’(সিবিসিএস) বিভাগে ‘রিভিউ’ না থাকায় আপত্তি তুলল শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি। এমনকী স্নাতক স্তরে তথ্য জানার অধিকার আইনে খাতা দেখার সময়সীমা এক মাসের মধ্যে করার দাবি জানিয়ে লিখিত চিঠিও পাঠালেন পূর্ব মেদিনীপুরের দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়ের টিএমসিপি ইউনিট নেতৃত্ব।
গত অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমেস্টারের ফল ঘোষণা করে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর ওই সেমেস্টারে অকৃতকার্য পড়ুয়াদের খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২১ অক্টোবর ওই নির্দেশিকা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ৫৪টি কলেজে পাঠিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামকের কাছে নির্দিষ্ট বয়ানে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার খাতার প্রত্যয়িত নকল পাওয়ার জন্য আবেদন জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ কিংবা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মাধ্যমে প্রাপ্ত মার্কশিটের প্রত্যয়িত নকলের সঙ্গে নগদ ৪০০ টাকা জমা দিতে হবে। সমস্ত কলেজকে অকৃতকার্য পড়ুয়াদের ওই আবেদনপত্র আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তার পরেই এই নির্দেশিকা ঘিরে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একাধিক কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের বক্তব্য, পরীক্ষার খাতা পাওয়ার জন্য আবেদন পত্রের উত্তর কিংবা তথ্য জানার অধিকার আইনে প্রতি উত্তর পেতে নির্দিষ্ট সময়সামী বেঁধে দেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগে এই পদ্ধতিতে। ততদিনে তৃতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা চলে আসবে। তা ছাড়া তাঁরা যে পরীক্ষার খাতার প্রত্যয়িত নকল কপি পাবেন, তা কাকে দেখাবেন এবং তার প্রাপ্ত নম্বর কীভাবে যোগ হবে তা নিয়েও কোনও উল্লেখ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশিকায়।
ছটপুজোর জন্য কলেজে এখন ছুটি। তা সত্ত্বেও বিষয়টি জানার পর দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতৃত্ব আন্দোলনে নামেন। ইতিমধ্যে তাঁরা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীর কাছে ই-মেল মারফত নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছেন। টিএমসিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পছন্দমাফিক মিশ্রিত পাঠ্যক্রম বিভাগে রিভিউ এবং তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদনের পদ্ধতি চালুর পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়া অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালনার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে কলেজ পড়ুয়ারা যাতে এক মাসের মধ্যে আগের সেমেস্টারের ফল জানতে পারেন তার ব্যবস্থা এবং তথ্য জানার অধিকার আইনের আবেদন ফি ৪০০ থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে।
দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়ের টিএমসিপির ইউনিট সভাপতি আবেদ আলি খান বলেন, ‘‘পুরনো এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হলে পড়ুয়াদের যথেষ্ট ক্ষতি হবে। আগামী সেমিস্টারের পড়াশোনা তারা ঠিকমত করতে পারবে না। তাই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মতো সেমেস্টারে রিভিউ প্রথা চালু করতে হবে।’’
শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজ অধ্যক্ষ সংগঠনের সম্পাদক ও কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দে। তিনি জানান, স্নাতক স্তরে সেমেস্টারের পর রিভিউ প্রথা চালুর জন্য তাঁরাও দাবি জানিয়েছেন।
যদিও, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সিবিসিএস-এ পুনর্মূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ‘রিভিউ’ নয়, তাকে ‘রি- এগজামিনেশন’ বলা হয়। সিবিসিএস চালুর গোড়া থেকেই এই ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীকে আগে আরটিআই করে খাতা দেখে নিতে হয়। তারপর আবেদন করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিবিসিএসেও পুনর্মূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে।’’ আরটিআই-এর উত্তর সময়ে না দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক হরিপ্রসাদ সরকার বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দেওয়া তা হয়।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরের একটি কলেজের কয়েকজন ছাত্র এ ব্যাপারে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে সিবিসিএসে পুনর্মূল্যায়ন ব্যবস্থা যে নেই তা নয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রিভিউ ব্যবস্থা চালু হলে কখনও সময়ের মধ্যে পাঠক্রম শেষ হবে না। সে ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বাড়বে।’’