ঝুমুর সম্রাট প্রয়াত বিজয় মাহাতো। —ফাইল চিত্র।
তাঁর গানের জাদুতে একাকার হয়ে যায় জঙ্গলমহল। সেই ‘ঝুমুর গানের সম্রাট’ প্রয়াত বিজয় মাহাতোর নামাঙ্কিত মেলার আয়োজনে পুরোভাগে এ বার শাসকদলের নেতা, জনপ্রতিনিধিরা।
সূত্রের খবর, এ বার গুরুত্ব বাড়িয়ে এটিকে জেলাস্তরের মেলা হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ হয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের এই তোড়জোড় নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। যদিও জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতোর দাবি, ‘‘মেলার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। শিল্পীর পরিজন যাতে জন্মস্থানে সুষ্ঠুভাবে মেলার আয়োজন করতে পারেন, তাই আমরা কয়েকজন পাশে দাঁড়িয়েছি।’’ অজিত জুড়ছেন, ‘‘শিল্পী বিজয় মাহাতোর আবেদন সর্বজনীন। বিজয়দা ছিলেন ঝুমুর গানের প্রতিষ্ঠান। তাই এবার মেলার পরিসর বাড়িয়ে দু’দিন করা হয়েছে।’’ ভবিষ্যতে শহরেও শিল্পীর নামাঙ্কিত পৃথক মেলা করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিজয় যেহেতু দীর্ঘসময় অরণ্যশহরে কাটিয়েছেন, তাই মধুবন এলাকায় তাঁর মূর্তিও বসছে।
এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুড়মি আন্দোলনের পারদ চড়েছিল জঙ্গলমহলে। লোকসভা ভোটের আগেও জাতিসত্তার দাবিতে একাধিক কুড়মি সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। ফলে, বড় পরিসরে বিজয় মাহাতোর নামাঙ্কিত মেলা উদ্যাপনের উদ্যোগ বিশেষ ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে কুড়মি আন্দোলনের মঞ্চে বিজয়ের গান বেজেছে। জঙ্গলমহলের পালা-পার্বণেও তঁর গান বাজানো হয়। তবে জনপ্রিয় শিল্পীর যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বলে ক্ষোভ রয়েছে অনুরাগীদের। বরাদ্দের অভাবে সরকারি ঝুমুর মেলাও আর হয় না।
২০১৯ সালের ২২ জুন ৬৪ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন বিজয়। বিভিন্ন মহলের দাবি সত্ত্বেওপ্রয়াত শিল্পীর নামে এখনও ঝাড়গ্রামে রাস্তার নামকরণ হয়নি। সরকারি উদ্যোগে মূর্তিও বসেনি। তবে একটি কুড়মি সংগঠনের উদ্যোগে জামবনির ব্লক সদর গিধনিতে বিজয়ের আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়েছে। এই আবহেই এ বার বিজয়ের নামাঙ্কিত মেলার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছেন জেলা তৃণমূলের নেতা-জনপ্রতিনিধি ও কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের কর্মকর্তারাও। বিজয়ের জন্মস্থান হল জামবনি ব্লকের কাদোপিন্ড্রা গ্রাম। পরে তিনি ঝাড়গ্রাম শহরে আসেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মধুবনের বাড়িতেই ছিলেন।
২০২১ সালে শিল্পীর মেয়ে পম্পা মাহাতোর উদ্যোগে কাদোপিন্ড্রা গ্রামে বিজয় মেলা শুরু হয়। পম্পাও একজন ঝুমুর শিল্পী। এ বার তৃতীয় বর্ষে মেলার নামকরণ হয়েছে ‘ঝাড়গ্রাম জেলা বিজয় মেলা’। বিগত দু’বছর একদিনের মেলা হয়েছিল। এ বার হবে দু’দিন, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর। কেউ কেউ মেলা জেলা শহরে সরানোর কথাও ভেবেছিলেন। তবে বিজয়ের পরিবার ও অজিতরা আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেন শিল্পীর জন্মস্থানেই মেলা হবে। ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজয়কে নিয়ে স্মৃতিচারণা, আলোচনাসভা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর রাত পর্যন্ত হবে ঝুমুর গানের অনুষ্ঠান। পরদিন সমাপ্তি সন্ধ্যাতেও জঙ্গলমহলের বিশিষ্ট ঝুমুর শিল্পীরা অনুষ্ঠান করবেন। সব ঝুমুর শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এ বার ঝাড়গ্রাম জেলা বিজয় মেলার মূল পৃষ্ঠপোষক হলেন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা পুরপ্রতিনিধি অজিত মাহাতো, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নিশীথ মাহাতো, কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারপার্সন রথীন্দ্রনাথ মাহাতো। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে পম্পার সঙ্গে অজিতরা মেলা নিয়ে একপ্রস্থ বৈঠক করেন। কাদোপিন্ড্রাতেও মেলার প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে। পম্পা বলছেন, ‘‘গত দু’বছর মেলা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছিল। এ বার অজিতদা, রথীন্দ্রনাথবাবুরা সক্রিয়ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’
বিশিষ্ট ঝুমুর শিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতো বলছেন, ‘‘উদ্যোগটি ভাল। আমি আমন্ত্রণ পেয়েছি। কমিটিতেও আছি।