ঝাড়গ্রাম কলেজ মোড় করম থানে পুজো। সোমবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। সেই আবহেই সোমবার জঙ্গলমহলে পালিত হল মূলবাসী কুড়মিদের করম পরব। এই প্রথমবার করম পরবে পূর্ণদিবস ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে ছিল উৎসবের মেজাজ। তৃণমূল এবং বিরোধী শিবিরের উদ্যোগেও জঙ্গলমহলের নানা জায়গায় করম পরব পালন করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রামে সবচেয়ে বড় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানটি হয় জেলা শহরে। ঘোড়াধরা করম পরব কমিটির আয়োজনে। মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা পুরপ্রতিনিধি অজিত মাহাতো। বিকেলে কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশন চত্বর থেকে অজিতের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা জেলাশহর পরিক্রমা করে। শোভাযাত্রায় ছিলেন মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো, রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র তন্ময় ঘোষ, জেলা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন তথা জেলা পরিষদের বন-ভূমি কর্মাধ্যক্ষ বিরবাহা সরেন টুডু, জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী নিয়তি মাহাতো, রাজ্য তৃণমূলের সহ সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নিশীথ মাহাতো, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুমন সাহু, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অঞ্জলি দোলাই, কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারপার্সন রথীন্দ্রনাথ মাহাতো, প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস, তিন পুরপ্রতিনিধি শিউলি সিংহ, সোনা মল্ল ও গৌরাঙ্গ প্রধান প্রমুখ। শোভাযাত্রা শেষে ঘোড়াধরা স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকার করম থানে করম গাছের ডাল পুঁতে নেগাচারী ক্রিয়াকলাপ হয়। সারা রাত পরিবেশিত হয় কুড়মি লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান।
অজিত বলেন, ‘‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার। অন্যের ধর্মকে সম্মান প্রদর্শন করলে নিজের ধর্ম আরও গরিমা লাভ করে। উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে আমরা সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই।’’ এদিন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা সমাজমাধ্যমে করম পুজোর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মন্ত্রী বিরবাহা বলেন, ‘‘রাতে কয়েকটি করম পরবের অনুষ্ঠানে থাকব।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু কোনও কর্মসূচিতে যোগ দিতে না পারলেও সর্বসাধারণকে করম পরবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারপার্সন রথীন্দ্রনাথ মাহাতো জানান, রাজ্যের বরাদ্দ টাকায় জেলার ৮টি ব্লকে ও পুর এলাকার দু’টি জায়গায় করম পরব পালনের উদ্যোগ হয়েছে।"
বিজেপির উদ্যোগেও বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় করম পরব পালিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিটি হয়েছে বেলপাহাড়ির সন্দাপাড়া অঞ্চলে। সেখানে বিজেপির বেলপাহাড়ি মণ্ডলের সভাপতি যুগলকিশোর মান্ডি ও জেলা যুব মোর্চার সহ সভাপতি তপন মাহাতোর উদ্যোগে করম পরব পালিত হয়। জেলা সভাপতি তুফান মাহাতো অবশ্য এদিন জেলায় ছিলেন না। তিনি পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে দলের উদ্যোগে করম পরবের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘লোক দেখানো আড়ম্বরের পরিবর্তে আমরা নিশ্চুপে কাজ করি। সেই ভাবেই করম করবও বিভিন্ন এলাকায় পালন করা হয়েছে।’’সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলছেন, ‘‘উৎসব পালনের অধিকার সকলের। তবে তা যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়, সেটা অনভিপ্রেত। এই ধরনের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির কর্মসূচি থেকে আমরা দূরত্ব বজায় রাখি।’’
কুড়মি সামাজিক নেতা রাজেশ মাহাতো সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় বিভিন্ন করম পরবের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের করম পরব পালন সম্পর্কে রাজেশ বলছেন, ‘‘উৎসব সবার। সে কেউ পালন করতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে করম পুজোর আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু যেন বিকৃত না করা হয়।’’
লোকসংস্কৃতি গবেষক ক্ষিতীশ মাহাতো মনে করিয়ে দিয়েছেন, “প্রাচীনকাল থেকে কুড়মিরা কৃষিকে নির্ভর করেই জীবনশৈলী গড়ে তুলেছেন। সেই জীবনশৈলী নির্মাণের একটি দিক ফুটে ওঠে করম পরব ও তার অনুসঙ্গ জাওয়া পরবে। উন্নত শস্য ও সুনাগরিক দিয়ে সমাজ গড়ার বার্তা রয়েছে এই উৎসবে।”