দলের সম্মেলনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের বিরুদ্ধে। জেলা কমিটি গঠনের জন্য রাজ্য জুড়ে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’-র সম্মেলন হওয়ার কথা। জেলা সম্মেলনের আগে প্রতিটি চক্রে সেই সম্মেলন শুরুও হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, কোথাও স্কুল বন্ধ রেখে হচ্ছে সম্মেলন। আবার কোনও স্কুলে দিবা বিভাগের ক্লাস হচ্ছে সকালে।
সোমবার গড়বেতা দক্ষিণ চক্রের স্কুল বন্ধ রেখে সম্মেলন হয়েছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সম্মেলনের জন্য কেশপুরে সকাল সকাল ক্লাস সেরে ফেলেছিলেন শিক্ষকরা। সংগঠনের জেলা সভাপতি চন্দন সাহা তিনি স্বীকার করেছেন, “স্কুল পরিদর্শকের অনুমতি নিয়েই কেশপুর চক্রে দুপুরের পরিবর্তে সকালে স্কুল হয়েছিল। দুপুরে সম্মেলন হয়।’’ তবে গড়বেতায় সম্মেলনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখব।”
যদিও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও পড়ুয়ারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবকের কথায়, “সম্মেলন হবে বলে হঠাৎ এ ভাবে কেউ স্কুল বন্ধ করে? হঠাৎ একদিন সকালেই বা স্কুলে আসবে কেন পড়ুয়ারা? স্কুলটা আগে না সম্মেলন?” প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি ধীমান কোলেও। তিনি বলেন, “আমিও একজন শিক্ষক। ছাত্র স্বার্থে এটা বলব যে, ছুটির দিনেই শিক্ষকদের সম্মেলন করা উচিত। বাম আমলের ট্রাডিশন থেকে বেরিয়ে আসুক তৃণমূলের শিক্ষক নেতারা।”
কিন্তু সম্মেলনের ক্ষেত্রে রাজ্য কমিটির কী নির্দেশ রয়েছে? সে বিষয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’-র রাজ্য সভাপতি শ্যামপদ পাত্র বলেন, “শনিবার স্কুল ছুটির পর বা রবিবার ছুটির দিনে সম্মেলন করতে হবে। রাজ্য কমিটির এই সিদ্ধান্তের কথা প্রতিটি জেলাকে বলে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সময় পড়ানো। স্কুল ছুটির পরে সংগঠনের কাজ। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন এমন করল সংগঠন। এক শিক্ষক-নেতার সাফাই, “ছুটির দিন সম্মেলন হলে বেশিরভাগ শিক্ষকই আসতে চান না। প্রত্যেকেরই বাড়িতে কাজ থাকে। তাই স্কুলের দিনই বেছে নেওয়া হয়।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রাথমিকের ৬৯টি চক্র রয়েছে। ঝাড়গ্রাম মহকুমা বাদে জেলার তিনটি মহকুমার (মেদিনীপুর, খড়্গপুর ও ঘাটাল) চক্রগুলিতে সম্মেলন শুরু হয়েছে। প্রতিটি চক্রেই নতুন কমিটি তৈরি হচ্ছে। তারপর হবে জেলা সম্মেলন। সেখানে ঝাড়গ্রাম থাকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ, প্রশাসনিক ভাবে ঝাড়গ্রাম নতুন জেলা হিসাবে তৈরি না হলেও শাসক তৃণমূলের সংগঠনের ক্ষেত্রে তা আলাদা জেলা হিসাবেই চিহ্নিত। শিক্ষক সংগঠনের ক্ষেত্রে এখনও এ ব্যাপারে অবশ্য চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। চন্দনবাবু বলেন, “ঝাড়গ্রামে এখনও সম্মেলন শুরু করিনি। তবে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছি। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে ঝাড়গ্রাম নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”