Didir Suraksha Kavach

স্কুল চলাকালীনই  হাজির ‘দিদির দূত’

নেতৃত্ব-সহ বিধায়কেরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি স্থানীয় ধর্মীয়, সামাজিক স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৬
Share:

স্কুল চত্বরে তৃণমূলের প্রচার গাড়ি । নিজস্ব চিত্র

সব ঠিকঠাক চলছে তো! জানতে ‘দিদির দূতে’রা ঢুকে পড়লেন স্কুলে।

Advertisement

সোমবার দুই বিধায়কের এই কীর্তিতে হইচই শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে। বিরোধীদের অভিযোগ, ‘দিদির দূত’ তো একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতে দলীয় পতাকা নিয়ে কেন জন প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবেন। স্কুল চলাকালীন কি এ ভাবে কোনও কর্মসূচি পালন করা যায়। এক বিধায়কের ব্যাখ্যা, দলীয় পতাকা লাগানো গাড়ি বাইরে রেখেই স্কুলে ঢুকেছিলেন তিনি। বিধায়ক হিসেবে এ এক্তিয়ার তাঁর আছে। আরেক বিধায়কের বক্তব্য, মিড ডে বিলির সময় গিয়েছিলেন তিনি।

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘোষিত ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি পালন চলছে রাজ্য জুড়ে। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব-সহ বিধায়কেরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি স্থানীয় ধর্মীয়, সামাজিক স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করছেন। দলের কর্মীদের বাড়িতে রাত্রিবাসও করছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেও এই কর্মসূচি পালনে নেমেছেন তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র-সহ জেলার অন্য তৃণমূল বিধায়কেরা। এ দিন ওই কর্মসূচি পালনে সৌমেন গিয়েছিলেন তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। আর ওই কর্মসূচি পালনে স্থানীয় বল্লুক গ্রামে একটি মন্দির ও জানুবসান গ্রামে একটি মসজিদে যাওয়ার পাশাপাশি সৌমেন বল্লুক বীণাপাণি গার্লস হাইস্কুল, বল্লুক প্রাথমিক স্কুল ও বল্লুক হাইস্কুলে গিয়েছিলেন। তৃণমূলের পতাকা বাঁধা একটি টোটোগাড়িতে চেপে সৌমেন-সহ দলের ব্লক ও অঞ্চলের নেতৃত্বরা বল্লুক হাইস্কুলে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন। এর পাশাপাশি পড়ুয়াদের কাছ থেকে জানেন সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল পেয়েছে কিনা, কন্যাশ্রী প্রকল্পে সুবিধা পেয়েছেন কি না। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে হাইস্কুলের পরিকাঠামোর কোন অসুবিধা রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে খোঁজ নেন।

Advertisement

সৌমেন পিংলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক হয়ে স্কুল চলাকালীন সেখানে ঢুকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কি ন্যায়সঙ্গত? সৌমেনের জবাব, ‘‘দলীয় পতাকা নিয়ে স্কুলের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার অভিযোগ সঠিক নয়। দলীয় পতাকা কার হাতে দেখলেন, কী ভাবে দেখলেন তা-ও আমার জানা নেই। আমি একজন বিধায়ক, জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্কুলে যাওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। দলের পতাকা লাগানো গাড়ি স্কুলের বাইরে ছিল।’’

সৌমেনের পাশাপাশি এ দিন নন্দকুমারের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার দে চকশিমুলিয়া গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি পালনে গিয়েছিলেন। কর্মসূচিতে সুকুমার দলের স্থানীয় নেতৃত্বদের নিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলার পাশাপাশিই চকশিমুলিয়া বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সে সময়ে বিধায়কের সঙ্গে দলের কর্মীরা ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির লোগো সহ ব্যানার নিয়ে ওই স্কুলের মধ্যে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ। সুকুমার অবশ্য বলছেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা দলীয় কর্মসূচিতে রয়েছে। তবে আমি যখন স্কুলে গিয়েছিলাম তখন পঠনপাঠন হচ্ছিল না। পড়ুয়াদের মিড ডে মিলখাওয়ানো হচ্ছিল।’’

তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচিতে বিধায়ক- সহ দলের নেতাদের এ ভাবে প্রাথমিক, হাইস্কুল স্কুল পরিদর্শন করার ঘটনা নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধী বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ মাইতির অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে যে ভাবে স্কুলের পঠনপাঠন চলাকালীন বিধায়ক সহ দলের নেতা-কর্মীরা সেখানে যাচ্ছেন এবং পড়ুয়াদের প্রশ্ন করছেন তা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৃণমূল নেতারা এ ভাবে রাজনৈতিক প্রচার করে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের উপর প্রত্যক্ষভাবেই মানসিক চাপ সৃষ্টি করছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement