এই বাড়িই বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সাড়ে ৮ লক্ষ টাকায় দলেরই কার্যালয় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। দলীয় কার্যালয় ফেরত চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন দলের নিচু তলার কর্মীরা।
কোলাঘাট ব্লক তৃণমূল সূত্রে খবর, গোপালনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গঙ্গামাড়ো রাইন মোড়ে ২০১৮ সালে সেচ দফতরের জায়গায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় গড়ে ওঠে। প্রায় এক হাজার বর্গফুট জায়গায় তৈরি একতলা ওই বাড়ি থেকে তৃণমূলের দলীয় কাজকর্ম পরিচালিত হত। অভিযোগ কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা গোপালনগর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মানব সামন্ত সম্প্রতি দলীয় কার্যালয়টি সাড়ে ৮ লক্ষ টাকায় শেখ রাজা নামে এলাকার এক যুবককে বিক্রি করে দেন। রাজা ওই বাড়ির দখল নেওয়ার পর স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজাকে বাড়িটি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও তিনি রাজি হননি। অগত্যা দলীয় কার্যালয় ফিরে পেতে এলাকার যুব তৃণমূল নেতৃত্ব যুব তৃণমূলের কোলাঘাট ব্লক সভাপতি রাজকুমার কুণ্ডুকে লিখিত আবেদন জানায়। স্থানীয় যুব নেতা সৈয়দ আলি আসলাম বলেন, ‘‘আমাদের দলের নেতা মানব সামন্ত গঙ্গামোড় রাইনের দলীয় কার্যালয়টি বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই কার্যালয়ে বসে মাদার এবং যুব দুই সংগঠনেরই কাজকর্ম পরিচালিত হত। আমরা দলীয় কার্যালয় ফেরত চেয়ে ব্লক নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’’
যাঁর বিরুদ্ধে দলীয় কার্যালয় বিক্রির অভিযোগ সেই মানব সামন্তর অবশ্য দাবি, ‘‘আমি নিজের টাকায় ওই বাড়ি তৈরি করেছিলাম। দলের থেকে এক টাকাও নিইনি। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় আমি বাড়িটি নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে দলকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম। বাড়িটি সেচ দফতরের জায়গায় রয়েছে। আমার বাড়ি আমি বিক্রি করতেই পারি। আমার বিরুদ্ধে অযথা অপপ্রচার করা হচ্ছে।’’ কিন্তু সরকারি জায়গায় অনুমতি ছাড়া কীভাবে বাড়ি করলেন? মানবের সাফাই, ‘‘ওটা খাস জায়গা। ফাঁকা পড়ে ছিল। অনেকেই সরকারি খাস জায়গায় নির্মাণ করে। আমিও করেছিলাম। বাডিই তো বিক্রি করেছি। জায়গা তো আর বিক্রি করিনি!’’
আরও পড়ুন: বাড়িতে অনটন, পড়ার স্বপ্ন ফেলে আনারস ফেরি ফাইভের ছাত্রের
তৃণমূল যুব ব্লক সভাপতি তথা কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি রাজকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘দলীয় কার্যালয় কেউ বিক্রি করতে পারেন না। ওখানকার স্থানীয় নেতৃত্ব আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আমি জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’’
দলীয় কার্যালয় বিক্রির পিছনে গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে বলে দলের একাংশের মত। কোলাঘাট ব্লকে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী রয়েছে। তৃণমূল নেতা অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিপ্লব রায়চৌধুরীর গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই দীর্ঘদিনের। অভিযুক্ত মানব সামন্ত বিপ্লব রায় চৌধুরীর অনুগামী বলেই পরিচিত। এ বিষয়ে বিপ্লব রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘মানব নিজের টাকায় ওই বাড়ি তৈরি করেছিলেন। উনি দলের একজন বিশ্বস্ত সৈনিক। নিজের এলাকায় জনপ্রিয়। দলের একটা অংশ ওঁর জনপ্রিয়তাকে ছোট করতেই কুৎসা রটাচ্ছে।’’ তৃণমূলের কোলাঘাট ব্লক সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গঙ্গামাড়ো রাইন মোড় এলাকায় দলের কার্যালয় মানব সামন্ত বিক্রি করেছেন শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: এখনও আমপানের আবেদন, জমছে সিঁড়ির তলাতেই
সেচ দফতরের জায়গা দখল করে কী ভাবে বাড়ি তৈরি হল? এ বিষয়ে সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় সেচ দফতরের বহু খালি জায়গা পড় রয়েছে। ওই বাড়িটি সেচ দফতরের জায়গায় তৈরি হয়েছে কিনা তা নথি না দেখে বলা সম্ভব নয়।’’